ভরা মৌসুমেও খুলনায় ইলিশের আকাল, আকাশছোঁয়া দামে ক্রেতাদের হাহাকার

বাংলার মানুষের প্রিয় মাছ ইলিশ—যার স্বাদের তুলনা নেই। কিন্তু ভরা মৌসুমেও খুলনার বাজারে ইলিশের দেখা মেলা ভার। যে অল্প কিছু মাছ আসছে, তার দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের ভাষ্যমতে, গত বছরের তুলনায় এবার দাম কয়েক গুণ বেড়েছে।

ঘাটে নেই সরবরাহ
খুলনার ভৈরব নদের পাড়ের ৫ নম্বর ঘাট ও রূপসা মাছ ঘাট—যেখানে প্রতিদিন ভিড় জমে ইলিশে ভরা নৌকায়, সেখানে এখন সরবরাহ প্রায় শূন্য। দেখা মিলছে কেবল অল্প কিছু জাটকা ইলিশের। স্থানীয় আড়তদার সাঈদ আলী বলেন, “প্রায় ৭০-৮০ বছরের ব্যবসায় কখনো এমন আকাল পড়েনি। খুচরা ব্যবসায়ীরাও এখন অন্য মাছের দিকে ঝুঁকছেন।”

দাম শুনেই ক্রেতারা পিছু হটছেন
নিউমার্কেট ও ময়লাপোতা বাজারে ইলিশের দাম সাধারণ ক্রেতাদের হতাশ করছে।

এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ: কেজি ২,৭০০ টাকা

৭০০-৯০০ গ্রাম: কেজি ২,২০০ টাকা

৬০০-৭০০ গ্রাম: কেজি ১,৯০০ টাকা

৪০০-৬০০ গ্রাম: কেজি ১,২০০ টাকা

রিকশাচালক জালাল হোসেন বলেন, “দুই বছর আগে মেয়ের বায়নায় সাড়ে ৫০০ টাকায় চারটা জাটকা কিনেছিলাম। এরপর আর কেনা হয়নি। এখন বাজারে গিয়ে শুধু দেখি, কেনা আর হয় না।”

মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে
নিউমার্কেটে বাজার করতে আসা মাসুমা লিমা বলেন, “ভরা মৌসুমেও ইলিশ নাগালের বাইরে। সাধ থাকলেও মুখে তোলা হয়নি। এখন ফেসবুকে ছবি দেখেই স্বাদ মেটাতে হচ্ছে।”

ব্যবসায়ীরাও বিপাকে
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ক্রেতা না আসায় তাদেরও ব্যবসা টিকে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী বাদশা মোড়ল বলেন, “এখনকার দামে মাছ তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। ক্রেতারা আর আগের মতো আসেন না। সারা দিন বসে থেকেও কয়েকটা মাছ বিক্রি হয়।”

আরেক ব্যবসায়ী প্রান্ত জানান, অনেক সময় ইলিশ কয়েক দিন দোকানে পড়ে থাকে। তখন বাধ্য হয়ে কিনে আনা দামে বা তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয়। ফলে ব্যবসা থেকে লোকসানই বাড়ছে।

খুলনার বাজারে ভরা মৌসুমেও ইলিশের আকাল তৈরি হয়েছে। সরবরাহ কম, দাম কয়েক গুণ বেশি, ফলে ইলিশ এখন মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের জন্য নাগালের বাইরে চলে গেছে। একসময় পরিবারের আনন্দের অংশ ছিল এই জাতীয় মাছ, এখন অনেকের কাছে সেটি কেবল স্মৃতির গল্প কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ছবিতে সীমাবদ্ধ।

Share This News