ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ কমিটিতে বড় সংস্কার: তিন বছর মেয়াদ, সদস্য সীমিত করা হলো

ইসলামী ব্যাংকগুলোর শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি (এসএসসি) গঠনে বড় ধরনের সংস্কার আনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রোববার জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। এর আগে সদস্য সংখ্যা, মেয়াদ কিংবা সম্মানির কোনো সুনির্দিষ্ট বিধান না থাকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, শরিয়াহ কমিটিতে এখন থেকে সর্বোচ্চ তিন বা পাঁচজন সদস্য থাকতে পারবেন। বর্তমানে কিছু ব্যাংকের কমিটিতে ১২ থেকে ১৬ জন পর্যন্ত সদস্য রয়েছেন, যা এখন থেকে আর হবে না। প্রতিটি সদস্যের নিয়োগ ও অপসারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কমিটির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে তিন বছর। একজন সদস্য সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ অর্থাৎ টানা ছয় বছর একটি ব্যাংকের কমিটিতে থাকতে পারবেন। এরপর দুই বছর বিরতি দিয়ে তিনি আবার সদস্য হওয়ার সুযোগ পাবেন। আগে এ ধরনের কোনো সীমাবদ্ধতা ছিল না।
একই ব্যক্তি একসঙ্গে তিনটির বেশি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শরিয়াহ কমিটির সদস্য হতে পারবেন না। এই বিধান করা হয়েছে যাতে সদস্যরা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাজে যথেষ্ট সময় ও মনোযোগ দিতে পারেন।
শরিয়াহ কমিটির সদস্য হতে হলে যোগ্যতার ক্ষেত্রেও কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়েছে। কোনো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ বিষয়ক বিভাগে কমপক্ষে দুই বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অথবা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ফতোয়া বোর্ড বা শরিয়াহ কমিটিতে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কোনো স্বীকৃত পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ থাকলে তিনি সদস্য হতে পারবেন না।
সম্মানির ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে একজন সদস্য সম্মানি হিসেবে ২৫ হাজার টাকা এবং প্রতিটি সভায় উপস্থিতির জন্য সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা পাবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, আগে সম্মানির কোনো বিধান না থাকায় অনেক ব্যাংক নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করত।
শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির দায়িত্ব হলো ইসলামী ব্যাংকগুলোর সব কার্যক্রম শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা। পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক, প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখা এবং ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো – সবার জন্যই এই কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, কমিটি গঠনের দায়িত্ব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হলে পর্ষদই দায়ী থাকবে। তবে পর্ষদকে অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইন-কানুন ও বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে এবং বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) বা বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের এ বিষয়ে অবহিত করতে হবে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এই সার্কুলারে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, আগামী বছরের ১ জানুয়ারির মধ্যে ব্যাংকগুলোকে নতুন নিয়মে শরিয়াহ কমিটি গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ ইসলামী ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।