খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কমেছে, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু

প্রায় চার-পাঁচ মাস পর দেশের স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় চট্টগ্রামের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে আমদানি শুরু হওয়ার খবরে বাজারে দামের প্রভাব পড়েছে, যদিও সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে দামের ওঠানামা অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির খবরে গত শুক্রবার থেকে খাতুনগঞ্জে দাম কমতে শুরু করে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় উঠেছিল। মঙ্গলবার সকালে দাম নেমে আসে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। তবে বিকেলের দিকে বাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ভারত থেকে পেঁয়াজের নতুন চালান আসছে না, ফলে দাম আবার ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় ঠেকে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লা মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, “মঙ্গলবার সকালে পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। কিন্তু দুপুরের দিকে বাজারে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে ভারত থেকে পেঁয়াজের গাড়ি আসছে না। এর ফলে বিকেলে দাম আবার ৬৫ থেকে ৭০ টাকা হয়ে যায়।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জে প্রায় ১০–১১টি পেঁয়াজবাহী ট্রাক এসেছে, যা প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৩০০ কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে নিয়ে এসেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১২ আগস্টের সিদ্ধান্তের পর ১৪ আগস্ট থেকে সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের মধ্যপ্রদেশ থেকে ১০০ টন পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে।

গত চার-পাঁচ মাস ধরে চট্টগ্রামের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ তেমন দেখা যায়নি। চাহিদার প্রায় পুরোটাই মিটিয়েছে দেশি পেঁয়াজ। তবে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমতে শুরু করায় দাম বাড়তে থাকে। আগস্টের শুরু থেকে প্রতি সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা করে বাড়ছিল। ২ আগস্ট পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু ১২ আগস্টের মধ্যে দাম বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় পৌঁছে। খুচরা বাজারে ভোক্তাদের প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে ৯০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়েছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য বড় চাপ সৃষ্টি করেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের বাজারের অধিকাংশ চাহিদা মেটায় ফরিদপুর, তাহেরপুর, পাবনার মতো এলাকা থেকে আসা দেশি পেঁয়াজ। তবে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজার এখন আমদানি করা পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আহসান খালেদ বলেন, “আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে আসার আগেই এর খবরে দাম কমে যায়। একইভাবে আমদানি বন্ধের খবরও বাজারে আগে ছড়িয়ে পড়ে, যার কারণে দাম ওঠানামা করে। আমদানি স্বাভাবিক থাকলে দাম আরও কমবে। তবে সরবরাহ না থাকলে দাম আবার বাড়তে পারে।”

চট্টগ্রামে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের সরবরাহ এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি, ফলে দামও তেমন কমেনি। অনেক খুচরা ব্যবসায়ী খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই থেকে খালি হাতে ফিরেছেন। বহদ্দারহাট বাজারের ব্যবসায়ী মুহাম্মদ ফারুক বলেন, “পেঁয়াজের চাহিদা সারা বছরই থাকে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় খুচরা দোকানিরা পণ্য পাচ্ছেন না। কারণ, আড়তেই পেঁয়াজের সরবরাহ এখনো কম। আমদানি বা দেশি পেঁয়াজ—যেকোনোভাবে সরবরাহ বাড়াতে না পারলে পেঁয়াজের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে।”

Share This News