খুলনায় এপিও সেমিনার: টেকসই উৎপাদনশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে নতুন কৌশল উন্মোচিত

খুলনা, ৪ সেপ্টেম্বর:

নিজের ব্যবসার ক্ষেত্রে যেটুকু মুলধন আছে তার সর্বোচ্চ ও সঠিক ব্যবহার করে সফলতাকে ছিনিয়ে আনতে হবে। গবেষনা ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত বিশে^র সাথে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতে হবে এবং টিকে থাকতে হবে। শিল্প মন্ত্রনালয় এর আওতাধীন ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অর্াগাইজেশন (এনপিও)  আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা নিশ্চিত করা। এনপিও ইতিমধ্যেই এলাকাভিত্তিক উৎপাদনশীলতা কর্মসূচি চালু করেছে এবং প্রতিষ্ঠানভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতি ও SME খাতকে শক্তিশালী করা সম্ভব হবে, যা জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিনিয়োগ শুধুমাত্র পরিমাণে নয়, অবচয়ের চেয়ে বেশি হতে হবে যাতে উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা হয়।”

এশিয়ান প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (APO) এবং ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (NPO) যৌথভাবে আয়োজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশের টেকসই উৎপাদনশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নতুন দিকনির্দেশনা উপস্থাপন করা হয়েছে। সেমিনারে সরকারি কর্মকর্তারা, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং তারিখ খুলনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক খান মেহেদী হাসান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনপিও গবেষনা বিভাগের পরিচালক মোঃ আরিফুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনপিও এর উর্ধ্বতন গবেষনা কর্মকর্তা রিপন সাহা,সহকারী সিস্টেম এনালিস্ট মোঃ আমিনুল ইসলাম,খুলনা প্রেস ক্লাবের আহবায়ক এনামুল হক,সদস্য সচিব রাফিউল ইসলাম টুটুল।

মুল প্রবন্ধে প্রবন্ধক মুলতঃ উৎপাদনশীলতা কি এবং কেন প্রয়োজন: কম সম্পদ ব্যবহার করে বেশি আউটপুট তৈরি করার ক্ষমতা। দেশের অর্থনীতিতে উৎপাদনশীলতার ভূমিকা: উচ্চ উৎপাদনশীলতা কম খরচে বেশি উৎপাদন নিশ্চিত করে, প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের আয় বৃদ্ধি করে এবং জাতীয় আয়ের পরিমাণ বাড়ায়। বিদেশি বাজার দখলের কৌশল: আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা, প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। বিনিয়োগ বনাম অবচয়: উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগের পরিমাণ অবচয়ের চেয়ে বেশি হতে হবে। SME খাত এবং নারীর অংশগ্রহণ: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে প্রযুক্তি সহায়তা, অর্থায়ন ও বাজার সংযোগের মাধ্যমে উজ্জীবিত করা; নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে ক্ষমতায়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি। প্রতিবন্ধী কর্মশক্তি: দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০–১২% মানুষ প্রতিবন্ধী। তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করলে বিশাল মানবসম্পদ অর্থনীতিতে যুক্ত হবে। বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় সম্পদ: তরুণ জনসংখ্যা, মানবসম্পদ রপ্তানি, নারী শিক্ষা ও দক্ষতা, কৃষি ও কুটির শিল্প এবং ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক খান মেহেদী হাসান আরও বলেন, “উৎপাদনশীলতা উন্নয়নের মাধ্যমে কম খরচে বেশি পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব, যা প্রতিষ্ঠান, কর্মী এবং জাতীয় আয়ের উন্নয়ন নিশ্চিত করে। আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদন, প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষ শ্রমশক্তি এবং ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের তরুণ শক্তি এবং শিক্ষিত মানবসম্পদ এই উন্নয়নে বড় অবদান রাখতে পারে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান, কৃষি ও কুটির শিল্প এবং নারী ও প্রতিবন্ধী শ্রমশক্তি ব্যবহার করেও অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব।”

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি  আইন সহায়তা সংস্থা দি লিগ্যাল ডোরস চেয়্যারম্যান ও সিয়ামের নির্বাহী পরিচালক এ্যাড.মোঃ মাছুম বিল্লাহ “দেশে প্রচুর ছোট ব্যবসায়ী আছেন যারা ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করছেন। তাদের স্বীকৃতি দেওয়া, ভ্যাট হ্রাস এবং সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি। এর ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হবেন এবং জাতীয় অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবেন। সরকারের নীতি যদি সহজ, প্রণোদনা সহায়ক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়, তবে SME খাত ও গ্রামীণ অর্থনীতি আরও সক্রিয় হবে।”

রুপান্তর এর নির্বাহী পরিচালক স্বপন গুহ বলেন,মৌসুমী ফসল তোলার পর সঠিক সময়ে ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। আবার পরবর্তী উপযুক্ত সময়ে বাজার ধরতে গেলে পন্য মজুদ রাখার কোন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নাই। সে কারনে অনেকেই লোকসানের ভয়ে ফসল উৎপাদন থেকে সরে আসতে চায়।

আয়োজন সহযোগী সংস্থা সার্বজনিন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মির্জা মিরানা শিরিন বলেন ,সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্ময় না থাকার কারনে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে সরকারের আরোপিত ট্যাক্স ও ভ্যাটের পরিমান সহনশীল না হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী সরকারের রাজস্বখাতে অবদান রাখতে পারছে না বা আগ্রহী হচ্ছে না। প্রশিক্ষন না থাকায় অনেক ব্যবসায়ী না বুঝে অযাচিত খরচ করায় উৎপাদনে ভাটা পড়ে। সে কারনে সরকারী বিভিন্ন পর্যায়ের সহায়তা সহ বৃহৎ পরিকল্পনার প্রয়োজন। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন, লিগ্যাল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর ডিরেক্টর মোস্তাফিজুর রহমান শাকিল,অনলাইন নিউজ প্রোটাল নগরের খবর এর সহকারী বার্তা সম্পাদক মোঃ সাকিব হাসান,অদ্বিকা-র পরিচালক প্রত্যয় মাধব,রাজিব সাহা,তাসনিয়া আনজুম,মোনালিসা,শামীমা শুভ,নাজমা জামান,নাহিদ পারভীন,আশা,জেসমিন নাহার,সুমনা আক্তার,দিঘী খাতুন,সুমন শেখ,আবু বক্কার,তুহিন শেখ,কবির হোসেন,মিরাজ শেখ,আলিমুল শেখ,মোস্তফা হায়দার,শিপন শেখ,গাজী ফিরোজ,মোঃ আরিফ প্রমুখ।

সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা একমত হয়েছেন যে দক্ষতা, উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ব্যবহার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি বাংলাদেশের টেকসই উৎপাদনশীল জাতি হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেমিনারটি দেশের স্থানীয় অর্থনীতি, SME খাত এবং জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য নতুন কৌশল ও দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

Share This News