গাজায় যুদ্ধবিরতি টিকে আছে, তবে রক্ত থামেনি — সংঘর্ষের মাঝেই ভরছে হাসপাতালের বিছানা

গাজা যেন এক অনন্ত দুঃস্বপ্নে আটকে থাকা শহর। যুদ্ধবিরতির কাগজে হয়তো শান্তির সই আছে, কিন্তু গাজার আকাশ এখনো আগুনে লাল। মঙ্গলবার সকালে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সাংবাদিকদের বললেন— “যুদ্ধবিরতি কার্যকর আছে। মাঝে মাঝে ছোটখাটো সংঘর্ষ হতে পারে, কিন্তু ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া শান্তিচুক্তি টিকে থাকবে।”

কিন্তু বাস্তবতা যেন তার উল্টো চিত্র আঁকছে। একই দিনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। পরে সেই সংখ্যা বেড়ে ৩৩–এ পৌঁছায়। হাসপাতাল আর মরচুয়ারির ফাঁক গলে মৃত্যু যেন নতুন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে।

উত্তর গাজার সাবরা এলাকায় চারজন, দক্ষিণের খান ইউনিসে আরও পাঁচজনের প্রাণ গেছে। আহতদের সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে—যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি। হামলার আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু রাফাহ অঞ্চলে এক সৈন্য আহত হওয়ার পর সেনাবাহিনীকে “শক্ত প্রতিক্রিয়ার” নির্দেশ দেন। আর সেই নির্দেশের পরই শুরু হয় বোমাবর্ষণ।

অন্যদিকে, হামাস বলছে— তারা রাফাহর ঘটনায় জড়িত নয়, বরং ইসরায়েলই যুদ্ধবিরতি ভেঙেছে। তাদের দাবি, এই হামলার কারণে জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারের কাজও ব্যাহত হচ্ছে। “আমরা শান্তিচুক্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ,” বলেন হামাস নেতা সুহাইল আল–হিন্দি। “কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণই এখন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”

গাজার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানালেন, আল–শিফা হাসপাতালের পেছনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে—একটি বিশাল বিস্ফোরণ, ধোঁয়ায় ঢাকা চারপাশ, আতঙ্কে ছুটোছুটি মানুষ। ড্রোনের গর্জনে আকাশ কাঁপছে, নিচে আহতদের আর্তচিৎকারে মাটি।

রাতভর সাবরা এলাকায় চলেছে উদ্ধার অভিযান—খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে মরদেহ বের করার চেষ্টা করছে স্থানীয়রা। কাসাম ব্রিগেড জানিয়েছে, তারা দুই ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করেছে, কিন্তু ইসরায়েলি হামলার কারণে হস্তান্তর আপাতত স্থগিত।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন— ইসরায়েল এই হামলার বিষয়ে আগেই ওয়াশিংটনকে জানিয়েছিল। গাজার সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ত্রাণ সরবরাহও কঠোরভাবে সীমিত, যেন জীবিতদের বেঁচে থাকা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।

যুদ্ধবিরতি টিকে আছে—কাগজে, বক্তৃতায়, মাইক্রোফোনে। কিন্তু গাজার মাটিতে? সেখানে এখনো ধোঁয়া ওঠে, শিশুরা কাঁদে, আর মায়েরা হারানো মুখ খুঁজে ফেরে ধ্বংসস্তূপে।