জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বড় রদবদল: ১৮২ কর্মকর্তার বদলি, একজনের অবসর, একজন বরখাস্ত

অর্থ মন্ত্রণালয় আর এনবিআর-এর পৃথক আদেশে ১৮২ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার দপ্তর বদলে দেওয়া হয়েছে, একজন যুগ্ম কর কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে, আর গাজীপুরের এক কর পরিদর্শককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এসবের পিছনে যদিও সরকার ‘জনস্বার্থ’ বলে দাবি করছে, তবে অনেকে তো মনে করছেন এটা হয়তো কর আদায়ের চাপ বাড়ানোর জন্য একটা ক্লিন-আপ অপারেশন।

১৮২ জনের বড় বদলি

এনবিআর-এর দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস ও ভ্যাট প্রশাসন) তানভীর আহম্মেদের স্বাক্ষরিত একটা প্রজ্ঞাপনে এই ১৮২ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার বদলির খবর জানানো হয়েছে। এরা মূলত কর অঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাজ করত, আর এখন নতুন জায়গায় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পুরো তালিকা এখনও পাবলিক ডোমেইনে আসেনি – এনবিআরের ওয়েবসাইটে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকের কিছু বদলির নোটিফিকেশন আছে, কিন্তু এই ১৮২ জনের ফুল লিস্ট নয়।

যতদূর জানা গেছে, এই বদলিগুলো কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু কর্মকর্তা ঢাকার কর অঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম বা সিলেটের দিকে সরানো হয়েছে, যাতে নতুন মুখ নিয়ে ট্যাক্স কালেকশন বাড়ানো যায়। এনবিআরের সাম্প্রতিক আপডেট অনুযায়ী, ৪ সেপ্টেম্বরেই সহকারী কর কমিশনারদের বদলির কয়েকটা আদেশ জারি হয়েছে, কিন্তু এই সোমবারেরটা আলাদা – সম্ভবত ভ্যাট আর ইনকাম ট্যাক্সের জন্য। যারা প্রভাবিত হয়েছে, তারা তো এখন প্যাকিং করছে, কিন্তু এতে করদাতাদের উপর কী প্রভাব পড়বে, সেটা দেখতে হবে।

যুগ্ম কর কমিশনারের বাধ্যতামূলক অবসর

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে জারি একটা চিঠিতে কর অঞ্চল-১৬-এর যুগ্ম কর কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কারণ? চাকরির ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে, আর সরকার মনে করছে জনস্বার্থে এটা দরকার। এটা সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৫ ধারায় করা হয়েছে। তিনি অবসরের সব সুবিধা পাবেন, যেমন পেনশন, গ্র্যাচুয়িটি ইত্যাদি।

কিন্তু সত্যি বলতে, এরকম অবসর তো অনেক সময় পারফরম্যান্সের ইস্যুতে হয় – জাহাঙ্গীর আলমের ক্ষেত্রে কোনো স্পেসিফিক অভিযোগ উল্লেখ নেই, শুধু ‘জনস্বার্থ’। এনবিআরের মতো জায়গায় ২৫ বছর মানে অনেক অভিজ্ঞতা, তাই এটা হয়তো একটা লস।

গাজীপুরের কর পরিদর্শকের বরখাস্ত

এদিকে, সবচেয়ে হট খবরটা হলো গাজীপুরের কর পরিদর্শক মিজ কাজী নূরে সোহেলার। এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের স্বাক্ষরিত আদেশে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগ? ‘অসদাচরণ’ আর ‘পলায়ন’। মানে, চাকরির দায়িত্ব ফেলে পালিয়েছে বলে দাবি।

এটা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩(খ) এবং ৩(গ) ধারায় করা হয়েছে, আর বিধি ১২ অনুযায়ী তাকে গাজীপুর কর কমিশনারের অফিসে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে রাখা হয়েছে। বরখাস্তের সময় খোরাকি ভাতা পাবেন, কিন্তু পুরো স্যালারি নয়। আদেশটা জনস্বার্থে জারি, আর অবিলম্বে কার্যকর। এরকম অভিযোগ তো গুরুতর – যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে পার্মানেন্ট ডিসমিসালও হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিস্তারিত তদন্তের খবর নেই।

এই রদবদলগুলো এনবিআরের সাম্প্রতিক টার্গেট অর্জনের ফেলিওরের সাথে যুক্ত বলে মনে হচ্ছে। ফিসকাল ইয়ার ২০২৪-২৫-এ ট্যাক্স কালেকশন লক্ষ্যমাত্রার থেকে অনেক কম, আর নতুন বাজেটে আরও চাপ। তাই হয়তো নতুন কর্মকর্তা নিয়ে ফ্রেশ স্টার্ট দেওয়া হচ্ছে। তবে, এরকম হঠাৎ বদলি কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করতে পারে – বিশেষ করে যারা পরিবার নিয়ে সেটেলড।

Share This News