তামাক নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা চান বাটা

দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়কেও দায়িত্ব নিতে হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা)। সংগঠনটি বলছে, তামাক কোম্পানিগুলো সারাদেশে বেপরোয়াভাবে আইন লংঘন করছে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যমান আইন দ্রুত শক্তিশালী করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় অনলাইনে আয়োজিত এক সভায় এসব কথা বলা হয়। ভাইটাল স্ট্রাটেজিস বাংলাদেশের সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বলা হয়, দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্যই দায়ী অসংক্রামক রোগ। আর এই অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় বছরে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। তামাক শুধু স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্যই ক্ষতিকর নয়, এটি পরিবেশের জন্যও হুমকি।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সকল পণ্য নিষিদ্ধের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে দেওয়া হয়েছে। তামাকের ব্যবহার কমানো কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একক দায়িত্ব নয়। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়কেও দায় নিতে হবে।

তারা বলেন, ইতিমধ্যে অনেক মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাণিজ্য, অর্থ, কৃষি, শিল্প, খাদ্যসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে সহযোগিতার ভিত্তিতে এগিয়ে আসতে হবে।

মূল আলোচনায় সৈয়দ মাহবুবুল আলম তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বয় ও সহযোগিতার ওপর জোর দেন। সভায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ গাইডলাইন বাস্তবায়ন, আইন শক্তিশালীকরণ এবং তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে নীতি সুরক্ষায় করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

স্থানীয় সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা সারাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের অবস্থা পর্যবেক্ষণ, গবেষণা, ক্যাম্পেইন পরিচালনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে আর্থিক অনুদান প্রদানের মাধ্যমে সম্পৃক্ত করার অনুরোধ জানান।

আলোচকরা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে সারাদেশে টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটির সভা নিয়মিত করার পাশাপাশি আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।

সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) নতুন নেশা পণ্য নিকোটিন পাউচ তৈরির কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। এটি দেশের তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্যকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের সংবিধান, হাইকোর্টের আপিল বিভাগের রায় এবং সরকারের জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রচেষ্টার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবিলম্বে এ ধরনের ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়।

অনলাইন সভায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের অর্ধশতাধিক সংগঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা অনন্যা রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।