আসন্ন দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারাদেশে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। রাজধানীসহ দেশের ২ হাজার ৮৫৭টি পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বিজিবির ৪৩০ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
শনিবার বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতে পারে, সেজন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সীমান্ত এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার
বিজিবি কর্মকর্তা জানান, সীমান্ত এলাকাসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২৪টি বেইজ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। পূজা উৎসব চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এসব ক্যাম্প থেকে বিশেষ তৎপরতা চালানো হবে।
“পূজা উপলক্ষে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে বিজিবির গোয়েন্দা নজরদারি শক্তিশালী করা হয়েছে। একইসঙ্গে সীমান্ত এলাকায় বিশেষ টহলও পরিচালনা করা হচ্ছে,” বলেন শরিফুল ইসলাম।
মণ্ডপের বিস্তৃতি ও নিরাপত্তা বিন্যাস
বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট ২ হাজার ৮৫৭টি পূজামণ্ডপের মধ্যে বিজিবির নিরাপত্তাধীন সীমান্তবর্তী ও পার্বত্য এলাকায় রয়েছে ১ হাজার ৪১১টি। আর সীমান্তবর্তী এলাকার বাইরে রয়েছে ১ হাজার ৪৪৬টি পূজামণ্ডপ।
সীমান্তের বাইরের পূজামণ্ডপগুলোর মধ্যে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ৪৪১টি। চট্টগ্রাম মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত ৬৯৪টি পূজামণ্ডপ এবং দেশের অন্যান্য স্থানে রয়েছে ৩১১টি পূজামণ্ডপ।
ব্যাপক সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বিজিবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তারা শুধু নিজস্ব বাহিনী মোতায়েনেই সীমাবদ্ধ নেই। স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি সমন্বিত নিরাপত্তা জাল তৈরি করা হয়েছে।
“দেশের জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি,” বলেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা।
গোয়েন্দা তৎপরতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
পূজা উৎসবে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানি বা অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য বিজিবি তাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী করেছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ বা নাশকতামূলক কার্যকলাপ প্রতিরোধে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত টহলদারি ছাড়াও বিশেষ টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে করে যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ দ্রুত চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
জাতীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় অঙ্গীকার
বিজিবি কর্তৃপক্ষ তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তারা সর্বদা জাতীয় শান্তি, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। দুর্গাপূজার মতো জাতীয় উৎসবে সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাও তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
“আমরা চাই বাংলাদেশের সব নাগরিক নিরাপদে ও আনন্দের সাথে তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করুক। এজন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে,” বলেন একজন ঊর্ধ্বতন বিজিবি কর্মকর্তা।
সতর্কতা ও জনসহযোগিতার আহ্বান
বিজিবি জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়েছে যে, পূজা উৎসব চলাকালে কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে যেন দ্রুত নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করা হয়। জনগণের সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমেই একটি নিরাপদ ও আনন্দময় উৎসব পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।
এবছর দেশব্যাপী দুর্গাপূজা উদযাপনে প্রত্যাশিত লাখো ভক্তের মধ্যে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরাই নয়, অন্যান্য ধর্মের মানুষেরাও অংশগ্রহণ করবেন। বিজিবির এই ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে যে সবার জন্য একটি নিরাপদ ও আনন্দদায়ক উৎসবের পরিবেশ।