নেট পাটার ফাঁদে ডুমুরিয়ার কৃষকরা: জলাবদ্ধতায় ২০০ হেক্টর সবজি নষ্ট, ক্ষতি ২ কোটি টাকা

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার প্রভাবশালীদের দখলদারিতে নদী ও খালে বসানো অবৈধ নেট পাটার কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ২০০ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত সাড়ে ১১ হাজার কৃষক। ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২ কোটি টাকা।

গত মে মাসে আগাম সবজি চাষ শুরু করেছিলেন স্থানীয় কৃষকরা। কিন্তু খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারী বর্ষণে জমে থাকা পানি দীর্ঘ সময় ধরে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকে। দেড় মাসেরও বেশি সময় পানিতে তলিয়ে থাকায় গোড়া পচে সবজির চারা নষ্ট হয়ে যায়।

” বটবেড়া গ্রামের কৃষক সমীর কুমার বিশ্বাস বলেন গত বছর এক বিঘা জমিতে কাঁকরোল চাষে ৫৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। এবার সব গাছ পানিতে তলিয়ে মারা গেছে। ক্ষতি হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা।”

আটলিয়া ইউনিয়নের কাঁঠালতলা গ্রামের কৃষক শেখ আবু হাসান জানান, চলতি মৌসুমে ২০ হাজার টাকা খরচ করে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছিলেন। ফলন আসার মুহূর্তে সব গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৯০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ডুমুরিয়ায় প্রায় ২০০–২৫০টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৪ গ্রামে রয়েছে অর্ধশতাধিক খাল। এসব খালে বসানো নেট পাটা পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রতিটি নেট পাটা বসাতে প্রভাবশালীদের ৩০–৪০ হাজার টাকা দিতে হয়। এই অর্থের বিনিময়ে তারা সব ব্যবস্থা ‘ম্যানেজ’ করার নিশ্চয়তা দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-আমিন সমকালকে বলেন, ‘প্রভাবশালীরা যাতে আর এমন কাজ করতে না পারে, সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থানে নেট পাটা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। আরও অভিযান চলবে।’

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মো. জিল্লুর রহমান রিগান বলেন, নেট পাটার সঠিক সংখ্যা নেই, তবে আনুমানিক তিন হাজার রয়েছে। উচ্ছেদের চেষ্টা চলছে।

গত অর্থবছরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৯৭ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে দেওয়া হয়েছে ৮৬ লাখ টাকা। কিন্তু গড়ে একজন কৃষক পাচ্ছেন ৮০০–৯০০ টাকা।

বরাতিয়া গ্রামের কৃষক প্রভাত মল্লিক বলেন, ‘৮০৫ টাকা পেয়েছি। অথচ ক্ষতি হয়েছে ৫০ হাজার টাকারও বেশি।’

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, জনগণের করের অর্থ দিয়ে ক্ষতিপূরণ দিয়ে প্রভাবশালীদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। স্থায়ী সমাধান না হলে প্রতিবছরই একই ঘটনা ঘটবে।

পরিবেশবাদী কাজল বিশ্বাস বলেন, নেট পাটা শুধু কৃষি নয়, দেশীয় মাছের প্রজননক্ষেত্রও ধ্বংস করছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ডুমুরিয়ার কৃষি ও জীববৈচিত্র্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

Share This News