সঞ্চয়পত্র খাতে নতুন এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। পাসওয়ার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে একজনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা টাকা আরেকজন তুলে নিয়ে গেছে। এই ঘটনার পর সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের আরও সতর্ক থাকার বিষয়টি সামনে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে গত ২৩ অক্টোবর ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনেন এক ব্যক্তি। তার ব্যাংক হিসাব ছিল অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায়। মাত্র চার দিন পর ২৭ অক্টোবর এই সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ফেলা হয় এবং টাকা চলে যায় এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখার অন্য এক ব্যক্তির হিসাবে। ওই টাকা জমা হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাংকটির রাজধানীর শ্যামলী শাখা থেকে তুলে নেওয়া হয়।
এটিই একমাত্র ঘটনা নয়। একই পদ্ধতিতে একই দিনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ লাখ এবং এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এলে তা আটকে দেওয়া হয়।
সঞ্চয়পত্র কিনলেই দায়িত্ব শেষ নয়
অনেকেই মনে করেন সঞ্চয়পত্র কিনলেই দায়িত্ব শেষ। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সঞ্চয়পত্র কেনা মানে বিনিয়োগ করা। আর বিনিয়োগ যেহেতু করলেন, তা সুরক্ষিত ও ঝামেলামুক্ত রাখার দায়িত্বও আপনার। এজন্য কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
নথিপত্র যত্নে রাখুন: সঞ্চয়পত্র কেনার পর ব্যাংক বা সঞ্চয় অফিস থেকে যে মূল নথি দেওয়া হয়, তাতে একটি কিউআর কোড থাকে। এই নথি যত্নসহকারে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ যেকোনো প্রয়োজনে এটি লাগবে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চুরির মতো ঘটনায় এসব নথি কাজে লাগবে।
ব্যাংক হিসাব সক্রিয় রাখুন: সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও আসল টাকা ব্যাংক হিসাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হয়। তাই নিশ্চিত করুন যে আপনার দেওয়া ব্যাংক হিসাবটি সবসময় সক্রিয় আছে। ব্যাংক হিসাব বন্ধ বা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যোগাযোগ করে তা আবার চালু করুন। না হলে মুনাফার টাকা এমনকি আসল টাকা পেতেও ভোগান্তি হতে পারে।
মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন: বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সাথে যুক্ত মুঠোফোন নম্বর বা ব্যাংক হিসাব নম্বর তাৎক্ষণিকভাবে পরিবর্তনের সুযোগ নেই। কোনো কারণে মুঠোফোন নম্বর বদলাতে হলে আবেদন করে সঞ্চয় অধিদপ্তরকে জানাতে হবে। মুঠোফোনেই সঞ্চয়পত্র হিসাবের লেনদেনের বার্তা আসে।
প্রতারণা এড়ানো: যেকোনো তথ্য পরিবর্তন, সুদ বা আসল টাকা তোলার জন্য আপনাকে অবশ্যই যে অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন সেখানেই আবেদন করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার মুঠোফোনে আসা কোনো ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) বা গোপন তথ্য কাউকে জানাবেন না। যতটা সম্ভব গোপন রাখতে হবে। পাসওয়ার্ড জালিয়াতি করেই সম্প্রতি অর্থ উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে।
নমিনির তথ্য সঠিক রাখুন: নিশ্চিত করুন যে নমিনির নাম ও অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে নথিতে আছে। গ্রাহক মারা গেলে নমিনি যাতে সহজেই সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করতে পারে বা মুনাফা তুলতে পারে, সেজন্য সঠিক তথ্য থাকা জরুরি।
মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন: জরুরি প্রয়োজনে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙানো যায়। তবে সেক্ষেত্রে মুনাফার হার কিছুটা কম হতে পারে বা জরিমানা কাটা হতে পারে। এ বিষয়ে নিয়মকানুন জেনে রাখা গ্রাহকের নিজের দায়িত্ব। না জানা থাকলে অফিসে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়বেন এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী কম টাকা পেলে হতাশ হতে পারেন।
সঞ্চয়পত্র নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হলেও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। নিজের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখতে এসব বিষয়ে সচেতন থাকুন।