সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা ঘিরে নেপালে ভয়াবহ বিক্ষোভ: পুলিশের গুলিতে নিহত ২০, পদত্যাগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নেপালে ভয়াবহ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে গতকাল (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২০ জন। আহত হয়েছেন শত শত মানুষ। সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তেজনা থামেনি, বরং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন করেছে সরকার।

কেন শুরু হলো বিক্ষোভ
প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন সরকার সম্প্রতি ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (সাবেক টুইটার), ইনস্টাগ্রামসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মূলত শিক্ষার্থীরা ও জেন-জি প্রজন্ম আন্দোলনে নামে। পরে তা দুর্নীতিবিরোধী গণআন্দোলনে রূপ নেয়।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগস্ট ২৮ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে নিবন্ধন করতে বলা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেটা, ইউটিউব, এক্স, রেডিট ও লিংকডইনের মতো কোনো প্রতিষ্ঠান আবেদন করেনি। ফলে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে এসব প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেয় সরকার। বর্তমানে টিকটক, ভাইবার, উইটক, নিম্বাস ও পোপো লাইভ নিবন্ধিত থাকায় দেশটিতে চালু রয়েছে।

বিক্ষোভের বিস্তার
প্রথমে রাজধানীর নিউ বানেশ্বরে বিক্ষোভ শুরু হলেও দ্রুত তা কাঠমান্ডু ছাড়িয়ে পোখারা, বুটওয়াল, ভৈরহাওয়া, ভরতপুর, ইটাহারি ও দামাকসহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবন চত্বরে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান ও রাবার বুলেট ছুড়ে। পরে গুলির নির্দেশ দেওয়া হলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

কারফিউ ও সেনা মোতায়েন
সহিংসতার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। শুরুতে শুধু বানেশ্বর এলাকায় সীমিত কারফিউ থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবন শীতল নিবাস, ভাইস প্রেসিডেন্টের বাসভবন, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন বালুওয়াটারসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় কারফিউ জারি করা হয়। সেনাবাহিনীও বিভিন্ন দপ্তর ও প্রশাসনিক এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রাণহানি ও হতাহত
কাঠমান্ডুর জাতীয় ট্রমা সেন্টারে আটজন, এভারেস্ট হাসপাতালে তিনজন, সিভিল হাসপাতালে তিনজন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে দুজন এবং ত্রিভুবন টিচিং হাসপাতালে একজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সুনসারি ও ইটাহারিতে আরও দুই বিক্ষোভকারী গুলিতে প্রাণ হারান। পুলিশ মুখপাত্র শেখর খানালের তথ্যমতে, প্রায় একশ জন বিক্ষোভকারী ও পুলিশ আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন।

মন্ত্রী পদত্যাগ
এই রক্তক্ষয়ী ঘটনায় নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির সরকারি বাসভবন বালুওয়াটারে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন।

নেপালে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী প্রায় ৩৬ লাখ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর এমন কঠোর পদক্ষেপে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করেছে। আন্দোলনের গতি ও সরকারের অবস্থান দেখে রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Source-রয়টার্স

Share This News