জরায়ুমুখের ক্যানসার, যা সার্ভিকাল ক্যান্সার নামেও পরিচিত, মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারগুলির মধ্যে একটি। এটি হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) নামক একটি ভাইরাসের সংক্রমণ দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই মারণব্যাধি নারীদের জীবন কেড়ে নেয় এবং তাদের পরিবারকে বিপর্যস্ত করে তোলে। তবে সুখের বিষয় হলো, এখন একটি টিকা उपलब्ध আছে যা জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে।
জরায়ুমুখের ক্যানসার কি?
জরায়ুমুখের ক্যানসার হলো জরায়ুর নীচের অংশের ক্যান্সার। জরায়ু হলো স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের একটি অংশ, যেখানে ভ্রূণ বিকাশ লাভ করে। এইচপিভি নামক একটি ভাইরাস দ্বারা জরায়ুমুখের কোষগুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে এই ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়।
এইচপিভি এবং জরায়ুমুখের ক্যানসার:
এইচপিভি একটি সাধারণ ভাইরাস যা যৌন সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। এইচপিভির অনেক প্রকার রয়েছে, যার মধ্যে কিছু প্রকার জরায়ুমুখের ক্যানসারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এইচপিভি সংক্রমণ সাধারণত নিজে থেকেই সেরে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।
জরায়ুমুখের ক্যানসারের লক্ষণ:
জরায়ুমুখের ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে রোগটি বাড়তে থাকলে কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন:
- অনিয়মিত রক্তপাত
- যৌন মিলনের পর রক্তপাত
- তলপেটে ব্যথা
- অস্বাভাবিক স্রাব
এই লক্ষণগুলি দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের উপায়:
জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো এইচপিভি টিকা গ্রহণ করা। এছাড়াও, কিছু বিষয় মনে রেখে এই রোগের ঝুঁকি কমানো যায়:
- এইচপিভি টিকা: এইচপিভি টিকা জরায়ুমুখের ক্যানসার সৃষ্টিকারী ভাইরাসগুলির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
- নিরাপদ যৌন সম্পর্ক: একাধিক যৌন সঙ্গী থাকলে বা অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে এইচপিভি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
- ধূমপান পরিহার: ধূমপান জরায়ুমুখের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা করানো উচিত।
এইচপিভি টিকা:
এইচপিভি টিকা জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এই টিকা ৯ থেকে ৪৫ বছর বয়সী সকল মহিলার জন্য প্রযোজ্য। টিকাটি তিনটি ডোজে দেওয়া হয় এবং এটি এইচপিভি ভাইরাসের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রকারগুলির বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
এইচপিভি টিকা কারা নিতে পারবে?
- ৯ থেকে ৪৫ বছর বয়সী সকল মহিলা এইচপিভি টিকা নিতে পারবে।
- যেসব মহিলারা আগে কখনো এইচপিভি টিকা নেননি, তারা এখন টিকা নিতে পারবেন।
- যৌন সক্রিয় হওয়ার আগে টিকা নিলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়, তবে যৌন সক্রিয় হওয়ার পরেও টিকা নেওয়া যেতে পারে।
এইচপিভি টিকা কোথায় পাওয়া যায়?
এইচপিভি টিকা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং টিকাদান কেন্দ্রে পাওয়া যায়।
জরায়ুমুখের ক্যানসার একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ:
জরায়ুমুখের ক্যানসার একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। এইচপিভি টিকা গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই, সকল মহিলাদের উচিত এইচপিভি টিকা নেওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
আমাদের করণীয়:
জরায়ুমুখের ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা সবাই একসাথে কাজ করতে পারি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, জরায়ুমুখের ক্যানসার বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান মৃত্যুর কারণ।
- প্রতি বছর প্রায় ৫ লক্ষ ৭০ হাজার মহিলা জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হন।
- বাংলাদেশেও জরায়ুমুখের ক্যানসার একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা।
জরায়ুমুখের ক্যানসার একটি ভয়াবহ রোগ, তবে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এইচপিভি টিকা গ্রহণ করে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে আমরা এই রোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।