তামাক লবির ‘গবেষণা’ ধরা পড়লো ফাঁদে: ৩৯ কোটি দোকানের মিথ্যা কথা বলে এনবিআরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা!

আসলে এটা কোনো গবেষণা নয়, এটা তো তামাক কোম্পানির ঘিনঘিনে প্রপাগান্ডা! বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) সোমবার একটা জ্বলজ্বল সংবাদি বিজ্ঞপ্তিতে সোজা বলে দিয়েছে – ইনসাইট মেট্রিক্স নামের এই প্রতিষ্ঠানটা বড় বড় তামাক জায়ান্টদের পক্ষপাতী, আর তাদের সেই ‘রিপোর্ট’টা পুরোপুরি বাজে, অবাস্তব আর হাস্যকর। এরকম মিথ্যা ছড়িয়ে তারা সরকারকে গুলিয়ে দিতে চায়, যাতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন আর কর বাড়ানোর উদ্যোগগুলো আটকে যায়। কিন্তু এবার ধরা পড়ে গেছে, আর বিএনটিটিপি বলছে, এনবিআর থেকে শুরু করে সবাই সতর্ক হোক!

কী বলছে এই ‘গবেষণা’? সবই তো অসম্ভব!

ইনসাইট মেট্রিক্সের রিপোর্টটা গত সপ্তাহে বের হয়েছে, আর সেটা পড়লে মনে হয় তারা কোনো ফ্যান্টাসি উপন্যাস লিখছে। তারা দাবি করছে, দেশে অবৈধ সিগারেটের বাজার ৩১% হয়ে গেছে, আর প্রতি মাসে ৮৩ কোটি ২০ লাখের বেশি অবৈধ স্টিক বাজারে ঢুকছে – গত বছরের চেয়ে ৩১% বেড়েছে। আরও মজার ব্যাপার, তারা বলছে সারা দেশে ৩৯.৬ কোটি দোকানে অবৈধ সিগারেট বিক্রি হয়! হ্যাঁ, ৩৯.৬ কোটি – যেটা দেশের মোট জনসংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি। ঢাকায় ৬.৮ কোটি, চট্টগ্রামে ১৪.৩ কোটি দোকান? ভাই, এটা কী রসিকতা? আর বলছে, খুচরা বিক্রেতাদের ৮২% অবৈধ সিগারেটের নিয়মিত সাপ্লাই পাচ্ছে। কিন্তু এরা যে বহুজাতিক তামাক কোম্পানির নিজস্ব নিয়ন্ত্রিত দোকানগুলো, সেটা ভুলে গেল কেন?

বিএনটিটিপির প্রকল্প পরিচালকের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এই রিপোর্টে গবেষণা পদ্ধতি, ডেটা কালেকশন বা স্যাম্পল সাইজের কোনো উল্লেখ নেই। সবকিছু একটা ‘এক্সটারনাল এজেন্সি’র উপর ভিত্তি করে, কিন্তু সেই এজেন্সির নামও দেয়নি। ফলে সত্যতা নিয়ে সন্দেহ তো থাকবেই। আর এই ইনসাইট মেট্রিক্স? তাদের ওয়েবসাইট দেখলেই বোঝা যায়, তারা মার্কেটিং রিসার্চ করে ক্লায়েন্টদের ‘ফাস্টার বিজনেস ডিসিশন’ নিতে সাহায্য করে। ক্লায়েন্টদের মধ্যে তামাক জায়ান্টরা আছে কি না, সেটা সরাসরি বলেনি, কিন্তু এরকম রিপোর্ট ছড়িয়ে তারা তো স্পষ্ট তামাক লবির পক্ষপাতী।

তামাক কোম্পানির পুরনো খেলা: কর বাড়ালে প্রপাগান্ডা শুরু

মনে আছে, গত ৯ জানুয়ারি এনবিআর সিগারেটের দাম আর কর বাড়িয়েছিল – সবাই তো প্রশংসা করেছে জনস্বাস্থ্য আর রাজস্বের জন্য। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো? তারা তো চটপট শুরু করেছে প্রোপাগান্ডা: ‘রাজস্ব ক্ষতি হবে, চোরাচালান বাড়বে, অবৈধ সিগারেট ফুলবে!’ এই রিপোর্টটা ঠিক সেই চেইনের অংশ। বিএনটিটিপি বলছে, এটা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনকে আটকানোর আর এনবিআরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা। আর কয়েকটা মিডিয়ায় এর সূত্র ধরে খবর ছাপিয়েছে, যা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। বিএনটিটিপি গণমাধ্যমকে বলছে, ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ হিসেবে আরও সতর্ক হোন, দেশের কল্যাণের জন্য।

বাস্তবে কী? এনবিআরের আটকের তালিকায় সিগারেট তো নেই শীর্ষ ১০-এ। আরক ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে, অবৈধ সিগারেট মাত্র ৫.৬২%, যার মধ্যে অবৈধ ট্যাক্স স্ট্যাম্প ৫.৩২%। আর ঢাকা ইউনিভার্সিটির গবেষণায় বলা হয়েছে, তামাক কোম্পানিগুলোই এমআরপির চেয়ে বেশি দামে বেচে বছরে ৫০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। বিএনটিটিপির মনিটরিংয়েও দেখা যায়, খুচরা দোকানগুলো তামাক কোম্পানির নজরে – নকল সিগারেট বিক্রির কথা তো হাসির খোরাক!

সত্যি কথা: বাংলাদেশের সিগারেট দাম বিশ্বে সস্তা, চোরাচালানের যুক্তি ফ্লপ

বিএনটিটিপি স্পষ্ট করে বলেছে, বিশ্বে যেখানে সিগারেট দাম বেশি, সেখান থেকে আমাদের মতো সস্তা দেশে চোরাচালান আসবে – এ যুক্তি তো পুরো ফ্লপ। প্রতিবেশী দেশগুলোতেই দাম অনেক বেশি। আর জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারের উদ্যোগগুলোকে আটকাতে এরকম মিথ্যা ছড়ানো তো তামাক কোম্পানির পুরনো কায়দা। তারাই তো প্রতি বছর কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে, আর এখন উল্টো অভিযোগ করে জনগণ আর সরকারকে গুলিয়ে দিতে চায়।

এইসব দেখে মনে হয়, তামাক লবিরা ভাবছে আমরা সবাই বোকা। কিন্তু বিএনটিটিপির মতো সংস্থা আছে বলে এদের খেলা ধরা পড়ছে। সরকারকে বলব, এই রিপোর্টগুলোকে গুরুত্ব দেবেন না – বরং জনস্বাস্থ্য আর রাজস্বের জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করুন।