দেশেই তৈরি হবে ডেঙ্গু ভ্যাক্সিন, আশার আলো দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

ডেঙ্গু এখন দেশে এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে স্বস্তির খবর এসেছে—দেশেই ডেঙ্গুর ভ্যাক্সিন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ও আইসিডিডিআরবির সহযোগিতায় একটি দেশীয় ওষুধ কোম্পানি এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উদ্যোগ সফল হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হবে।
চলতি বছর মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গু মৌসুমে আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে এবং মৃত্যু হয়েছে ২১৫ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, আগে শুধু বৃষ্টির মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও এখন সারা বছরই কমবেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তবে বর্ষাকালে এর তীব্রতা সবচেয়ে বেশি থাকে।
ডেঙ্গু বহনকারী এডিস মশা নিধনে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ব্যর্থতা এখন প্রকট। রাজধানীর পাশাপাশি সব বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলা এমনকি গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে এডিস মশা। তবে শহরকেন্দ্রিক এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।


হাসপাতালে চাপ বাড়ছে
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন শতাধিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। ২ হাজার ৬০০ বেডের এই হাসপাতালে বর্তমানে রোগীর সংখ্যা ৪ হাজারের বেশি। ডেঙ্গু ও অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “প্রতিদিন অন্যান্য রোগীদের প্রচণ্ড চাপ থাকে। এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগীদের চাপ যুক্ত হয়েছে। তবুও ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করছেন।” মুগদা, কুর্মিটোলা, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালসহ সারা দেশের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোর একই অবস্থা।


মশা নিধনে দায় সবার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সরকারি প্রশাসনকে দায়ী করলেই চলবে না। বাড়ির মালিক ও বাসিন্দাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। বাসাবাড়ি ও আঙিনায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে এই মশার বংশবিস্তার রোধ করা সম্ভব।
এমিরেটস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, “ডেঙ্গু জ্বর একটি চিহ্নিত মশার কামড়ে হয়। এই মশার বংশবিস্তার নিধন করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এডিস মশা নিধনে যত ধরনের ব্যবস্থা আছে, তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। অন্যথায় প্রতি বছর এটি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।”
তিনি আরও জানান, একই মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়াও হয়। প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে উত্তম ব্যবস্থা নিতে না পারলে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটিই ব্যাপক হারে বাড়তে থাকবে। “ভ্যাক্সিন যদি কার্যকরভাবে বাজারজাত হয়, এটা বাংলাদেশের জন্য সফলতা হবে,” বলেন তিনি।


বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অবহেলিত
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে মশক নিধনে বিশেষজ্ঞ কমিটি থাকলেও তাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না। বছরে দুই-একবার বৈঠক হয়, সুপারিশ দেওয়া হয়, কিন্তু সেগুলো আলোর মুখ দেখে না। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা এই সত্যতা স্বীকার করেছেন।
উত্তর সিটি করপোরেশনের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ও নিপসমের কীটতত্ত্ব বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার জানান, অনেক পরামর্শ দেওয়া হলেও একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। মশক নিধন ব্যবস্থাপনার করুণ অবস্থা সহজেই বোঝা যায়।


ভ্যাক্সিন নিয়ে আশাবাদ
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও শ্যামলী ২৫০ বেডের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ হাসপাতালের প্রধান ডা. আয়েশা আকতার বলেন, “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধই উত্তম ব্যবস্থা। কার্যকর টিকা যখন বাজারজাত হবে, তখন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।”
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. আকতার হোসেন বলেন, “দেশে ডেঙ্গু প্রতিষেধক ভ্যাক্সিন তৈরির উদ্যোগ একটি সুখবর। এটা সফল হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।”
উল্লেখ্য, বিশ্বের কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যে ডেঙ্গুর ভ্যাক্সিনের ট্রায়াল চলমান রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কার্যকর ভ্যাক্সিন বাজারে এলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের সাফল্য আসবে