প্রতিদিন কলা খেলে শরীরে যে চমৎকার পরিবর্তনগুলো ঘটে

স্বাস্থ্য ডেস্ক: সহজলভ্য, সস্তা এবং সুস্বাদু ফল কলা। সারা বছর পাওয়া যায় বলে এটি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার একটি জনপ্রিয় অংশ। কিন্তু প্রতিদিন একটি কলা খেলে আপনার শরীরে ঠিক কী ঘটে, তা কি জানেন? পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস আপনার স্বাস্থ্যে আনতে পারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

হৃদযন্ত্র থাকে সুস্থ

কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, যা হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একটি মাঝারি আকারের কলায় প্রায় ৪০০-৪৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। এই খনিজ উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। পুষ্টিবিদরা বলছেন, যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য প্রতিদিন একটি কলা হতে পারে প্রাকৃতিক ওষুধের মতো।

হজমশক্তি বাড়ে

কলায় থাকা প্রাকৃতিক ফাইবার পরিপাকতন্ত্রের জন্য বেশ উপকারী। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ করে। বিশেষ করে পাকা কলায় থাকা পেকটিন নামক ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। যাদের পেটের সমস্যা আছে, তারা সকালে খালি পেটে একটি কলা খেতে পারেন।

শক্তি জোগায় তাৎক্ষণিক

ক্লান্ত লাগছে? একটি কলাই হতে পারে দ্রুত সমাধান। কলায় থাকা প্রাকৃতিক শর্করা—গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করে। এ কারণেই ক্রীড়াবিদরা খেলার আগে বা পরে কলা খেতে পছন্দ করেন। অফিসে কাজের ফাঁকে বা ব্যায়ামের পর একটি কলা আপনাকে তৎক্ষণাৎ চাঙ্গা করে তুলতে পারে।

মন ভালো রাখে

কলায় থাকা ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড শরীরে সেরোটোনিন হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে, যা মন ভালো রাখতে কাজ করে। নিয়মিত কলা খেলে মানসিক চাপ কমে এবং ঘুম ভালো হয়। যারা বিষণ্নতা বা অ্যাংজাইটির সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য কলা একটি প্রাকৃতিক মুড বুস্টার হিসেবে কাজ করতে পারে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

অনেকের ধারণা, কলা খেলে ওজন বাড়ে। কিন্তু বাস্তবে সঠিক পরিমাণে কলা খেলে তা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। একটি মাঝারি কলায় মাত্র ১০০-১১০ ক্যালোরি থাকে এবং এতে কোনো চর্বি নেই। কলার ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

কলায় থাকা ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি৬ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে ঠান্ডা-কাশি বা মৌসুমি রোগের সময় প্রতিদিন একটি কলা খাওয়া উপকারী।

হাড় মজবুত করে

যদিও কলায় ক্যালসিয়াম খুব বেশি নেই, তবে এতে থাকা ফ্রুক্টোঅলিগোস্যাকারাইড শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। এছাড়া পটাশিয়াম হাড় থেকে ক্যালসিয়াম ক্ষয় রোধ করে। ফলে নিয়মিত কলা খেলে হাড় মজবুত থাকে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে।

কিডনি সুস্থ রাখে

কলার পটাশিয়াম কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে ৪-৬টি কলা খান, তাদের কিডনি রোগের ঝুঁকি প্রায় ৫০ শতাংশ কম থাকে। তবে যারা ইতিমধ্যে কিডনি রোগে ভুগছেন, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কলা খাওয়া উচিত।

সতর্কতা

প্রতিদিন একটি কলা খাওয়া স্বাস্থ্যকর হলেও অতিরিক্ত কলা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। অতিরিক্ত পটাশিয়াম কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমিত পরিমাণে কলা খাওয়া উচিত কারণ এতে শর্করার পরিমাণ বেশি।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রতিদিন একটি কলা রাখতে পারেন আপনার খাদ্যতালিকায়। এই ছোট্ট অভ্যাসটি আপনার স্বাস্থ্যে আনতে পারে বড় পরিবর্তন।

সূত্র: ভেরি ওয়েল হেলথ