ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগরায়নে বিজ্ঞ আইনজীবীদের ভূমিকা অপরিসীম। ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর গঠনের জন্য আইনসম্মত একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া গড়ে তোলা জরুরি, যেখানে রাজনৈতিক প্রভাব বা ব্যক্তিগত স্বার্থের কোনো অবকাশ থাকবে না। সেইসাথে এটি নিশ্চিত করার জন্য দৃঢ় আইন প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।
খুলনা: খুলনায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ও সিয়ামের আয়োজনে ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগরায়নে বিজ্ঞ আইনজীবীদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে খুুলনায় কর্মরত আইনজীবীদের সাথে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিয়ামের নির্বাহী পরিচালক এড. মাসুম বিল্লাহ এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন এডভোকেট মনিরুল ইসলাম পান্না।
অনুষ্ঠানে খুলনায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ও সিয়াম উদ্যোগে নগরের উন্নয়নে বেশ কিছু কাঠামো পেশ করে। নগরে ন্যায়সঙ্গত অন্তর্ভুক্তিমূলক উত্তরণ- এর উদ্দেশ্য তুলে ধরে আয়োজকরা বলেন, নগরের সামাজিক কাঠামোতে পরিবর্তন। নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় সকল শ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহন ও মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া। সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া । সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী চিহ্নিত করা ও তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করা। জলবায়ু বিপর্যয় রোধে কাজ করা নগর জীবনে সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। নগরের উন্নয়নে সকল শ্রেণীর মানুষকে মতামত দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার লক্ষেই এ উদ্যোগ।

উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ বলেন, শহরের জলাবদ্ধতার দূরীকরণের খুব প্রয়োজন এবং ড্রেন ব্যবস্থাপনা জলাবদ্ধতার মূল কারণ। ড্রেনের পরিকল্পনা সঠিকভাবে হওয়া প্রয়োজন তাহলে শহরবাসী বর্ষাকালে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।
খুলনার বর্তমান পরিস্থিতি দিন দিন খুব ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করতেছে শুধুমাত্র অপরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য। সেগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন নাহলে খুব শীঘ্রই ঢাকার মতো পরিস্থিতি হবে আমাদের এই প্রিয় খুলনা।
বিজ্ঞ আইনজীবীরা আরও বলেন, সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যেখানে সংস্কার করতে হবে বলে মনে করেন সেখানে সিটি কর্পোরেশন এবং নগর উন্নয়ন প্রকল্প একত্রে কাজ শুরু করতে পারে, নাহয় একেক সময় একেকজন কাজ শুরু করার পর সাধারণ জণগণ বিভিন্ন দুর্ভোগ পোহায়। আইনজীবীদের সাথে বিভিন্ন পরামর্শ নিয়ে বা তাদের সাথে করে কাজ শুরু করলে বিভিন্ন আইনী সমাধানের পাশাপাশি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শহরের একজন নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
বক্তারা আরও বলেন, খুলনা শহরকে একটি আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। আইনজীবীদের সাথে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দপ্তরের কর্মকর্তাদের এক টেবিলে বসিয়ে মতবিনিময় করা প্রয়োজন। এতে প্রতিটি দপ্তরের সমন্বয় সাধন সম্ভব হবে।

খুলনা শহরকে ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খুলনা শহর পূর্ব থেকেই দেশের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও, খুলনা শহরে বিভিন্ন শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এখানে ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে।
জনগণের অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ ব্যতীত এ সকল সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম ন্যায়সঙ্গত হওয়া সম্ভব নয়, কারণ একমাত্র জনগণই জানেন তাদের জন্য কোনটি প্রয়োজন। জন অংশগ্রহণ ছাড়া প্রকল্প গৃহীত ও বাস্তবায়িত হওয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক অসমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জনগণ সর্বময় ক্ষমতার উৎস। কাজেই জনগণের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোন কার্যক্রম ফলপ্রসূ হতে পারে না।
“ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর গঠনে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ রোধ করা অত্যন্ত জরুরী। এজন্য, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক একটি আইনগত কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। এই কাঠামোতে, নগর পরিকল্পনার সকল সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং জনস্বার্থে গৃহীত হবে। এছাড়াও, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে, নগর পরিকল্পনার সকল তথ্য জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য করা হবে।”

মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহন করেন, এডভোকেট এনায়েত হোসেন, এডভোকেট নিগার সুলতানা, এডভোকেট আরজিনা সুলতানা, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, এডভোকেট মো. মইনুল ইসলাম, এডভোকেট মাইকেল মন্ডল, এডভোকেট আইয়ুব হোসেন, এডভোকেট শেখ মনিরুজ্জামান, এডভোকেট কামরুন নাহার, এস এম নেওয়াজ, এডভোকেট লিপি চৌধুরী, এডভোকেট মো: কামরুল হোসাইন, নগরের খবর ও সিয়ামের আইটি অফিসার তানজিলা খাতুন, সিয়ামের প্রকল্প কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান শাকিল, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান ও মোঃ ইমরান মিয়া সহ অনেকে।