জনস্বাস্থ্যকে প্রাধাণ্য দিয়ে ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধে প্রজ্ঞাপন জারি করায় সরকারকে ধন্যবাদ: এ আদেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক-টিসিআরসি

তরুণ প্রজন্মের সুরক্ষায় ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ইএনডিএস) সংশ্লিষ্ট সকল পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধের আদেশ জারি করায় বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছে টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইলেকট্রনিক সিগারেটকে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইউএস সার্জন জেনারেল রিপোর্ট অনুযায়ী, ই-সিগারেট ব্যবহারে হার্ট এট্যার্ক, স্ট্রোক ও ফুসফুসের ক্ষতি হয়। ই-সিগারেটের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ইতোমধ্যেই বিশ্বের ৪২টি দেশ ই-সিগারেটকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে এবং আরো ৫৬টি দেশ ই-সিগারেট ক্রয়-বিক্রয়ের উপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। তরুণ প্রজন্মকে নেশায় আসক্ত করতে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসের (ভ্যাপিং, ই-সিগারেট) প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলো বহুজাতিক তামাক কোম্পানিসহ কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ী।

এমতাবস্থায় টিসিআরসিসহ বিভিন্ন তামাক-বিরোধী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই বাণিজ্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর ই-সিগারেটের ক্ষতিকর বিষয়গুলো তুলে ধরে তা বাংলাদেশে নিষিদ্ধের আহ্বান করে আসছিলো। এমনকি গত ৭ ডিসেম্বর ২০২২ টিসিআরসি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর ‘বাংলাদেশে ই-সিগারেটের ব্যবহার বন্ধে – অর্থ আইন, ২০১৮ এর তফশিল-১ এর এইচ.এস কোড থেকে ই-সিগারেট ও এর রিফিল এর আমদানি নিষেদ্ধের’ অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি (সূত্রঃ ০৯৪১০/ইউ/৩০০৪/ঞঈজঈ/২০২২) প্রেরণ করেছিল এবং গত ২৭ আগস্ট ২০২৩ তারিখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর ‘বাংলাদেশে ই-সিগারেটের আমদানি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের অনুরোধ প্রসঙ্গে’ একটি চিঠি (সূত্রঃ ০৯৪৫৯/ইউ/৩০০৪/ঞঈজঈ/২০২৩) প্রেরণ করেছিল। একই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ‘ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটি) নতুন পণ্য আমদানির নামে ই-সিগারেটের প্রসারের আবেদন নামঞ্জুরের অনুরোধ প্রসঙ্গে’ একটি চিঠি (সূত্রঃ ০৯৪৮৫/ইউ/৩০০৪/ঞঈজঈ/২০২৩) এবং তথ্য প্রেরণ; ২৫ নভেম্বর ২০২৩ টিসিআরসির উদ্যোগে ২৫টি সংগঠনের প্রেস কনফারেন্স আয়োজন ও সেই তথ্য প্রেরণ; ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিকট ই-সিগারেটকে ধূমপান ত্যাগের উপকরণ হিসেবে অনুমোদন না দেওয়ার অনুরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ক্রমাগত চিঠি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য প্রেরণ; গত ১৯ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ প্রায় ৫০জন আইনজীবিদের নিয়ে ই-সিগারেট নিষিদ্ধে করণীয় শীর্ষক একটি কর্মশালার আয়োজন করে। উক্ত কর্মশালায় আইনজীবিগণ ই-সিগারেটের আমদানি, রপ্তানি, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয়, বিতরণ, বিপনন, পরিবহণ, সংরক্ষণ, সরবরাহসহ সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে মতামত দেন এবং অবিলম্বে তা কার্যকর করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। আইনজীবিদের দাবি ও বিশ্বে ই-সিগারেটের নিষিদ্ধের তথ্য সমূহ টিসিআরসি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণ করেছে। এবং ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধের সরকারের সিদ্বান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবিতে গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত প্রায় ৫০ টি সংগঠন মানবন্ধন করে।  টিসিআরসি ছাড়াও তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত অন্যান্য সংগঠনসমূহও অনেক আগে থেকেই ই-সিগারেট বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল। ফলশ্রুতিতে, জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকের ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধেও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকের সিন্ধান্ত অনুযায়ী বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ একটি গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ই-সিগারেট/ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ঊঘউঝ) ও এ সংশ্লিষ্ট সকল পণ্যকে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। আমদানি ও রপ্তানি (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৫০-এর ধারা ৩-এর উপধারা (১)-এর ক্ষমতাবলে জারি করা এ প্রজ্ঞাপনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অধীন আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় ই-সিগারেট ও এসকল পণ্যকে সংযুক্ত করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানায় টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। টিসিআরসি ই-সিগারেটে নিষিদ্ধে সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কর্মরত সকল সংগঠন, সাংবাদিকবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছে।

টিসিআরসি মনে করে, সরকারের এই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে ই-সিগারেট ও এই সংশ্লিষ্ট সকল পণ্যের সব ধরনের ব্যবহার নিষিদ্ধ রাখাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জারিকৃত এই আদেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাচ্ছে টিসিআরসি।  জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এ নিষেধাজ্ঞা সরকারের একটি দূরদর্শী উদ্যোগ, যা ভবিষ্যতে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করার পথ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।