‘ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার। এই পেশাকে অন্য রকম ভালো লাগত। মনে হতো, আমি যদি তাদের মতো হতে পারতাম। এ জন্য মনে আশা নিয়ে চেষ্টা করে গেছি।’
কথাগুলো সুশোভন বাছাড়ের। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন খুলনার ছেলে সুশোভন। ডাক্তার হতে চাওয়ার একবারে প্রাথমিক শর্ত পূরণ হয়েছে। ভবিষ্যতে সুশোভন পড়তে চান নিউরোলজি নিয়ে। গরিব ও দুস্থ মানুষের জন্য কিছু করতে চান তিনি।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় খুলনা নগরের বয়রা এলাকায় একটি কোচিং সেন্টারের কক্ষে সুশোভন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ঘিরে সংবাদকর্মীদের ভিড়। শিক্ষক, স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের অনেকেই ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। চলছে মিষ্টিমুখ।
সুশোভনের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নে। থাকেন খুলনা নগরের বয়রা এলাকায়। তাঁর বাবা সুভাস চন্দ্র বাছাড় খুলনার টি অ্যান্ড টি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক। মা বন্দনা সেন একসময় শিক্ষক ছিলেন। এখন গৃহিণী। সুভাস চন্দ্র ও বন্দনা সেন দম্পতির একমাত্র সন্তান সুশোভন।
সুভাস চন্দ্র বাছাড় বলেন, ‘আমার ছেলে জাতীয় মেধায় প্রথম হয়েছে—এটা অবশ্যই গর্বের বিষয়। আমার ছেলে যে একটা ভালো পর্যায়ে স্কোর করবে বা ভালো পজিশন করবে, এ বিষয়ে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল। তার পরিশ্রম ও সততা তাকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে বলে আমি বিশ্বাস করি। পরিশ্রমের বিকল্প নেই। পরিশ্রম করলে বৃথা যাবে না। আমি ছেলেকে সব সময় এটা বলতাম। নিয়মিত পত্রিকা পড়াসহ অন্যান্য বইয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল সুশোভনের।’ তাঁর বাবা আরও বলেন, ‘ পত্রিকা নিয়মিত বাসায় রাখি। শিক্ষাবিষয়ক পৃষ্ঠা সে নিয়মিত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ত। আর বিশেষ করে বিজ্ঞানচিন্তা; ওর বিজ্ঞানের প্রতি প্রচণ্ড স্পৃহা। সে নিত্যনতুন আবিষ্কার, বিজ্ঞানের কোথায় কী হচ্ছে, এগুলোর খোঁজখবর রাখত।’
সুশোভনের মা বন্দনা সেন নগরের বয়রা এলাকায় হাজী ফয়েজ উদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতা ও পরিবার দেখভালের জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন।
বন্দনা সেন বলেন, ‘ছেলের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল শুনে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তারপর কেঁদে ফেলেছিলাম। সে কুয়েটেও চান্স পেয়েছে। সুশোভন যখন অনেক ছোট, তখন আমার একটা শারীরিক সমস্যা হয়েছিল। ওর বাবা তখন আমাকে বলেছিল, “তুমি চাকরি করলে ছেলেকে দেখবে কে, টাকাই তো সব নয়।” এরপর চাকরিটা ছেড়ে দিই।’
সফলতার পেছনে কার কার অবদান, তা জানতে চাইলে সুশোভন বলেন, ‘অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার কথা বলব। আমার মা–বাবার কথা; আমার অন্য আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের কথা বলব।’ একই সঙ্গে মেডিকেলে ভর্তির জন্য খুলনায় যে কোচিং সেন্টারে পড়েছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
২০২২ সালে যশোর বোর্ডের টি অ্যান্ড টি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ২০২৪ সালে সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন সুশোভন। দুটি পরীক্ষাতেই জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। কীভাবে পড়াশোনা করতেন, তা জানতে চাইলে সুশোভন বলেন, ‘আমি কখনো সময় হিসাব করে পড়াশোনা করিনি। রাত জেগে কখনো পড়িনি। এটাকে আমি সাপোর্ট করি না। পড়ার বাইরে খেলাধুলা করতাম। তবে আমি বই পড়া খুব পছন্দ করি। গল্প–উপন্যাস থেকে শুরু করে সায়েন্স ফিকশান, থ্রিলার–জাতীয় বই আমার খুব প্রিয়।’
ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার বিষয়ে সুশোভনের পরামর্শ হচ্ছে, ‘সৎভাবে পরিশ্রম করতে হবে। ভেঙে পড়লে চলবে না। অনেকে আবার মূল বইটাকে গুরুত্ব দেয় না, সেটা ভালো করে পড়ে না। মূল বই ভালো করে পড়ে তারপর অন্যান্য সহায়ক বই পড়লে আমার মনে হয় ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে পারে।’