ট্রাম্পের পরিকল্পনা স্থগিত করলেন মার্কিন বিচারক

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির ২ হাজার ২০০ কর্মীকে সবেতনে ছুটিতে পাঠানোর পরিকল্পনা স্থগিত করেছেন একজন মার্কিন বিচারক। এই কর্মীদের ছুটিতে পাঠানোর বিষয়টি কার্যকর হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে এ পদক্ষেপ নিলেন তিনি।

এর আগে শুক্রবারই (৭ ফেব্রুয়ারি) এই বিচারক ইউএসএআইডিকে ভেঙে দিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপ আটকাতে ‘সাময়িক’ নির্দেশের অংশ হিসেবে ওই স্থগিতাদেশ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টকে (ইউএসএআইডি) ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা রুখতে ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদালতে মামলা করা হয়। মামলার বাদী ‘আমেরিকান ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ’ ও ‘আমেরিকান ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’। মামলার ওপর শুনানিতে বিচারক ওই আদেশ দেন।

কর্মীদের ছুটিতে পাঠানোর পরিকল্পনা স্থগিত করার এ আদেশ দেন ওয়াশিংটনের ডিস্ট্রিক্ট বিচারক কার্ল নিকোলস। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন।

বিদেশে ইউএসএআইডির মাধ্যমেই মূলত যুক্তরাষ্ট্র তার উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সংস্থাটির কর্মীর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। তাঁদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই বিভিন্ন দেশে কাজ করেন।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউএসএআইডির এই বিপুলসংখ্যক কর্মীর মধ্যে অপরিহার্য হিসেবে মাত্র ৬১১ জনকে চাকরিতে বহাল রাখা হবে। ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থাটির সদর দপ্তর থেকে ইউএসএআইডির চিহ্ন সরিয়ে ফেলার পর বিচারক ওই আদেশ দেন।

মামলার শুনানি চলাকালে বিচারক নিকোলস বলেছিলেন, শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দিন শেষে এ বিষয়ে লিখিত আদেশ দেবেন তিনি।

শুনানিতে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীদের একজন কার্লা গিলব্রাইড বলেন, ‘ব্যাপকসংখ্যক কর্মীকে অপসারণের পাশাপাশি সংস্থার কার্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া, কর্মীদের জোরপূর্বক অন্যত্র স্থানান্তর—সবই করা হয়েছে নির্বাহী কর্তৃত্বের বাইরে গিয়ে। এটি ক্ষমতা বিভাজন নীতির লঙ্ঘন।’

ওই স্থগিতাদেশ দেওয়ার আগে মার্কিন বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ব্রেট শুমেট বিচারক নিকোলসকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনার অধীন ইউএসএআইডির প্রায় ২ হাজার ২০০ কর্মীকে সবেতনে ছুটিতে পাঠানো হবে। এ ছাড়া ৫০০ কর্মীকে এরই মধ্যে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট মনে করেন, ইউএসএআইডি দুর্নীতি ও জালিয়াতি করে।

যাহোক, বিচারকের আদেশের ফলে ওই দুই হাজারের বেশি কর্মীকে ছুটিতে পাঠানোর বিষয়টি আটকে যাবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কর্মরত ইউএসএআইডির মানবিক সহায়তাকর্মীদের অন্যত্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্তও স্থগিত হয়ে যাবে।

গতকাল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে কোনো প্রমাণ হাজির না করেই ইউএসএআইডির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও প্রতারণামূলকভাবে অর্থ খরচের অভিযোগ করেন।

গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সব বিদেশি সহায়তা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন। এরপর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্বজুড়ে ইউএসএআইডির প্রকল্পগুলো স্থগিত করার নির্দেশ দেয়। সংস্থাটির কম্পিউটার সিস্টেমও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কর্মীদের আকস্মিক ছাঁটাই করা বা ছুটিতে রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) করা মামলাটির আসামি করা হয়েছে ট্রাম্প, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে।

মামলায় বলা হয়েছে, ইউএসআইডিকে তছনছ করতে বিবাদীদের একটি পদক্ষেপও কংগ্রেসের অনুমোদনের সঙ্গে সংগতি রেখে নেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় আইন অনুসারে, কংগ্রেসই একমাত্র সত্তা, যা আইনত সংস্থাটিকে (ইউএসএআইডি) ভেঙে দিতে পারে।

মামলায় আরও বলা হয়, সংস্থাটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে ম্যালেরিয়া ও এইচআইভির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ ভয়ানক রকমের মানবিক বিপর্যয় তৈরি হবে।

ট্রাম্পের বিদেশি সহায়তা স্থগিত করা ও ইউএসআইডির কার্যক্রম বন্ধের পদক্ষেপ ক্ষুধা নিবারণের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকেও ব্যাহত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ইউএসএআইডিতে কাটছাঁট পদক্ষেপের একটা বড় অংশ তদারক করছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা এই ব্যবসায়ী কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্রকে সংকুচিত করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।