নাগরিক সচেতনতা এবং আইনের প্রতি সম্মানই পারে একটি ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর গড়ে তুলতে-বিভাগীয় কমিশনার খুলনা ও প্রশাসক,খুলনা সিটি কর্পোরেশন


“ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর গঠনে” অংশীজনদের সাথে এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা ৯ এপ্রিল ২০২৫ সকাল ১০টায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের শহীদ আলতাফ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এবং সিয়ামের যৌথ আয়োজনে আয়োজিত এই সভায় অংশগ্রহণ করেন নগর উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধ

সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সাইফুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট। তিনি বলেন, “খুলনাকে ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর হিসেবে গঠনের লক্ষ্যে আমাদের আজকের এই আয়োজন। আমাদের নাগরিক জীবনে বিদ্যুৎ, নিরাপত্তা, ড্রেনেজসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানে দ্বৈত খরচ করতে হচ্ছে, যা অনিয়মের একটি বড় নিদর্শন। এ অনিয়ম বন্ধে অংশীজনদের মতামত ও অংশগ্রহণ খুবই জরুরি।”

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফিরোজ সরকার, বিভাগীয় কমিশনার খুলনা ও প্রশাসক, খুলনা সিটি কর্পোরেশন বলেন, “ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর গঠনে দপ্তরের গুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। এককভাবে চিন্তা না করে সার্বিক কল্যাণের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রশাসন ও জনগণ পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে। নাগরিক সচেতনতা এবং আইনের প্রতি সম্মানই পারে একটি ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর গড়ে তুলতে।”

সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা নাগরিক যদি সচেতন এবং দায়িত্বশীল হই তাহলে কাজ আরও সহজ হয়ে যাবে। খুলনার দুইটি নদী আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। ভবন নির্মাণের সময় বিল্ডিং কোডে জলাশয় সংরক্ষণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বর্তমানে খুলনার যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণযোগ্য পর্যায়ে রয়েছে, তাই এখনই পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সুন্দরভাবে তৈরি করতে হবে।” তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

সভায় সন্মানিত আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন: মিলন সাহা, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, খুলনা জেলা প্রশাসন। তিনি বলেন, “উন্নয়ন একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া, যা টেকসই করতে হলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এগোতে হবে। ত. ম. রোকনুজ্জামান, সহকারী পুলিশ কমিশনার, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। তিনি বলেন, “যানজট নিরসনে করপোরেশন নিয়ন্ত্রিত গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণ এবং রাস্তার কাজগুলো সময়োপযোগী পরিকল্পনায় সম্পন্ন করতে হবে।”

মুনতাসীর মামুন, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তিনি জানান, “খুলনার উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান প্রণীত হয়েছে এবং অনলাইনে অনুমোদনের ব্যবস্থা চালু হয়েছে।”

আনিসুল হক, সড়ক ও জনপদ বিভাগ। তিনি বলেন, “জবাবদিহিতা না থাকায় অনিয়ম বাড়ছে। অংশীজনদের মতামত প্রদানের সুযোগের পাশাপাশি একজন প্রভাবক থাকা প্রয়োজন এবং এবিষয়ে মানদণ্ড নির্ধারণ করা প্রয়োজন”

অধ্যাপক তুষার কান্তি, কুয়েট। তিনি বলেন, “মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ হলেও বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে। পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি আইনের বাস্তবায়ন অপরিহার্য।”

মাসুদুর রহমান, সমাজসেবা কার্যালয়। তিনি বলেন, “পরিকল্পনা গ্রহণের সময় নিম্নবিত্ত এবং সুবিধা বঞ্চিত মানুষের চাহিদা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা জরুরি।”

সভাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মাসুম বিল্লাহ, নির্বাহী পরিচালক, সিয়াম।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দা অনন্যা রহমান, বিভাগীয় প্রধান, স্বাস্থ্য অধিকার বিভাগ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট।

আলোচনায় অংশ নেন বেলা খুলনার বিভাগীয় প্রধান মাহফুজুর রহমান মুকুল, সৈয়দ আলী হাকিম, গাজী মিকাইল, শিক্ষক লিয়াকত, গণমাধ্যমকর্মী হেদায়েত, ও শাহীন আক্তার পারভিন এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্য কর্মী, কাজী মোহাম্মদ হাসিবুল হক।
বক্তারা পুকুর ভরাট বন্ধ, জলাধার আইন বাস্তবায়ন, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা তৈরি, অবৈধ যান নিয়ন্ত্রণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
তারা বলেন, “মতবিনিময় নয়, এখন সময় মত বাস্তবায়নের।”

এই মতবিনিময় সভা খুলনা শহরের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা, সুশাসন ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে একটি কার্যকর উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।