কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিঃএনসিপি

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একমত জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কুয়েটের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে এনসিপি।

মঙ্গলবার(২২ এপ্রিল) রাত পৌনে ১০টায় রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির পক্ষ থেকে কুয়েটের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিদাওয়ার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অচলাবস্থা নিরসন করে হল খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া সার্বিক বিষয়ে ইউজিসির নেতৃত্বে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত। এতে বলা হয়, কুয়েটের উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছে এনসিপি। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বহিরাগতরা দেশি অস্ত্রসস্ত্রসহ হামলা চালায়। হামলায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশ না করলেও একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাতজন দলীয় কর্মী থাকার কথা বলেছেন।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে এ ধরনের আচরণ বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে লক্ষ করা গেছে। এ বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা এবং উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল থেকে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

উপাচার্যকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদের অধিকার সবার রয়েছে, তবে শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

এনসিপির নেতারা আরও বলেন, দুই মাস আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কুয়েট শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দিলেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, যা চরম দায়িত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ। আগামীকাল (বুধবার) ইউজিসির একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে পরিদর্শনে কুয়েটে যাবে বলে জানা গেছে।

সংবাদ সম্মেলন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক-উস সালেহীন ও ফয়সাল আহমেদ। শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের আদেশ উপাচার্য একা নিয়েছেন কি না, তাঁর পদত্যাগেই এর সমাধান কি না, জানতে চাইলে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আর কুয়েটের শিক্ষার্থীরা যেহেতু মনে করছেন, এ সংকট নিরসনের সমাধান ভিসির পদত্যাগ, তাঁদের এ দাবির সঙ্গে আমরা সংহতি জানাচ্ছি। পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে, শিক্ষা কার্যক্রম সচল করার জন্য এ ছাড়া কোনো দাবিদাওয়া দেখছি না। ইউজিসির অধীন একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করারও দাবি জানাচ্ছি।’

আরেকটি প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, কুয়েটের শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা যেসব কর্মসূচি দিচ্ছেন, দাবি জানাচ্ছেন—এনসিপি এসব যৌক্তিক দাবি ও মতামতকে সমর্থন জানায়। এ ইস্যুতে এনসিপির পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।