বিশ্ব কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস ২০২৫

টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত স্বাস্থ্যবান্ধব কর্মপরিবেশ

ঢাকার ৮ টি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে কিশোর কিশোরীদের শরীরচর্চার সুযোগ খুবই কম এবং শিক্ষার্থীরা দীর্ঘসময় ডিভাইসে সম্পৃক্ত থাকে। পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের ফলে তাদের মাঝে রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাসের অভাব। গবেষণায় দেখানো হয়, ৮১% কিশার কিশোরী যাদের বয়স ১১-১৭ তারা তেমন শরীরচর্চা করেন না, ৫৯% কিশোর কিশোরীরা শারীরিকভাবে যথেষ্ট স্বক্রিয় নয় , ৭৯% কিশোর কিশোরীরা দিনে দুই ঘন্টা বিনোদনের সময় ডিজিটাল স্ক্রীনে অতিবাহিত করেন। নিম্ন মধ্য ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে যেখানে ৩০% কিশোর কিশোরিরা শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ করে সেখানে বাংলাদেশে এই সংখ্যা ২২% থেকে ৩২%। ৪৭% শিক্ষার্থী প্রতিদিন কোমলপানীয় পান করে।

কর্মস্থলে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও নিরাপত্তা উৎপাদনশীল কর্মী তৈরি করতে পারে যা টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত । শারীরিক পরিশ্রম না করার কারণে সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগজনিত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। অসুস্থতাজনিত চিকিৎসা খরচের কারণে একদিকে যেমন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদিকে সরকারও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কর্মস্থলে Ai ভিত্তিক ডিজিটাল সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আজ ২৮শে এপ্রিল “কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস” ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে সকাল ১১.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর উদ্যোগে অনলাইনে একটি উন্মুক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সন্মানিত সভাপতি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর স্বাস্থ্য অধিকার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান। সন্মানিত উপস্থাপক হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর রিসার্চার এবং বাংলাদেশ অ্যাকটিভ হেলদি কিডস এর সদস্য সচিব ড. কাজী রুমানা আহমেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর কমিউনিকেশন অফিসার শানজিদা আক্তার। এবার দিবসটির এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘শ্রমজীবী মানুষের অধিকার, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের অঙ্গীকার’ ।

স্কুল ভিত্তিক এই গবেষণা প্রতিবেদনে দেখানো হয়, Cluster Randomised Controlled Trial সিস্টেমের মাধ্যমে ৮ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ৩২০ জন শিক্ষার্থী নির্বাচন করে ৩-৬ মাসব্যাপী এই গবেষণায় পরিচালিত হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা ,শরীর চর্চা, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস , অতিরিক্ত ডিভাইস ব্যবহারের অপকারিতার পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করা হয় । এই গবেষণার মূল বিষয় ছিল শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে শিক্ষাক্রম তৈরি করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরি করা এবং কমিউনটিকে সম্পৃক্ত করা । এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, শ্রেণিকক্ষে ১০ মিনিট আলোচনা, দুপুরে খাবারের পর ২০ মিনিট স্বাস্থ্য শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন করা হয়। পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরবর্তী পর্যায়ে দেখা যায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শরীরচর্চা ও শাক সবজি, ফলমূল গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। অতিরিক্ত ডিভাইস নির্ভরতার এবং কোমল পানীয় ব্যবহারের মাত্রা কমেছে।

সভায় বক্তারা, শরীরচর্চা শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কোভিড পরবর্তী পর্যায়ে শিশুদের মোবাইলের প্রতি আসক্তি বেড়ে গেছে যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে weiæc প্রভাব ফেলছে। বিদ্যালয়গুলোতে পাঠাগার স্থাপন এবং পরিবেশ সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে শিক্ষার্র্থীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শরীরচর্চার জন্য পৃথক সময় নির্ধারণ করা , শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগ, মেডিকেল টিম রাখার পাশাপাশি স্কুল কমিটিগুলোকে স্বাস্থ্য উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। পিতা মাতা ‍ও সন্তানদের মাঝে সম্পর্কোন্নয়ন কিশোর অপরাধকে কমিয়ে আনতে পারে।

সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, স্বাস্থ্য উন্নয়নে রোগ প্রাতরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধূলার সুযোগ কিশোর কিশোরীদের নের্তৃত্ব দেবার মানসিকতা তৈরি করে। মেয়েদের খেলাধূলার সুযোগ তৈরির পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের ব্যবস্থা করা, কর্মীদের জন্য হাঁটার সময় নির্ধারণ এবং অফিস চত্বরে ধূমপান নিষিদ্ধকরণে স্বাস্থ্যবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ThaiHealth স্বাস্থ্যকে প্রধান্য দিয়ে সকল ধরণের কার্যক্রম গ্রহণ করছে। স্বাস্থ্য উন্নয়নে নীতি নির্ধারকদের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগে গ্রহণ করতে হবে ।

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ৪০ টি সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ৪ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীবৃন্দ ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ।