সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে তথ্যের উপর জোর দিচ্ছে ডিএনসিসি

১৯ জুন ২০২৫, ঢাকা, বাংলাদেশ:

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি), ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) এবং ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের যৌথ উদ্যোগে ডিএনসিসির সভাকক্ষে আজ ‘ঢাকা উত্তর সিটির সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতির তথ্য উন্মোচন’ বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, এনডিসি, পিএসসি। বিআইজিআরএস, ঢাকার সমন্বয়কারী মো. আব্দুল ওয়াদুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) সুফিয়ান আহমেদ, সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কার্যরত আন্তর্জাতিক সংস্থা ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের কারিগরি উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম সুজন এবং বিআইজিআরএস-ঢাকার ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেটর ইঞ্জিনিয়ার রেজাউর রহমান বক্তব্য দেন।

সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রেকর্ড বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত ‘ঢাকা উত্তর সিটির সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতি প্রতিবেদন’ থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করেন বিআইজিআরএস-ঢাকার সার্ভিল্যান্স কোঅর্ডিনেটর ডা. তানভীর ইবনে আলী। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে ঢাকা উত্তর সিটিতে ১১৭টি রোড ক্র্যাশে ১২৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের ৬১ শতাংশই পথচারী এবং ২৪ শতাংশ মোটরসাইকেল আরোহী এবং অধিকাংশ মৃত্যুর পিছনে দায়ী বেপরোয়া বাস ও ট্রাক। প্রতিবেদনে ডিএনসিসির ছয়টি উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ স্থানও চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে রোড ক্র্যাশে মোট মৃত্যুর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ সংঘটিত হয়েছে। তিনি সড়কে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহারকারী অর্থাৎ, পথচারী ও মোটরসাইকেল আরোহীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কলাকৌশল অবলম্বন করে, বিশেষ করে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলিতে অবকাঠামোগত পরিবর্তন ও যথাযথভাবে সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগের মাধ্যমে পথচারী ও মোটরসাইকেল আরোহীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকায় পথচারী-বান্ধব সড়ক অবকাঠামো নিশ্চিত করতে কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি সড়কের ক্রসিং, ইন্টারসেকশন এবং ইউ-লুপ (ইউ-টার্ন) সংস্কারের জন্যও কাজ করছে ডিএনসিসি। বিআইজিআরএস-এর অংশীদার ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের কারিগরি সহায়তায় ডিএনসিসি রোড ক্র্যাশের স্থান চিহ্নিত করেছে, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করেছে। এছাড়া, আমরা আগামীতে সড়ক নিরাপত্তার ওপর একটি জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন আয়োজনের পরিকল্পনা করছি।

সভায় মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, নিরাপদ সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে সড়ক ব্যবহারকারীদের সচেতন করা প্রয়োজন। এজন্যই জনগণকে নিরাপদে সড়ক পারাপার ও নিয়ন্ত্রিত গতিতে যানবাহন চালানোর বিষয়ে সচেতন করার জন্য জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন জরুরি।

ডিএমপি’র যুগ্ম-কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) সুফিয়ান আহমেদ বলেন, ‘সড়ক পরিহবন আইন ২০১৮ ও সড়ক পরিবহন বিধিমালা ২০২২ অনুসারে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিএমপি কাজ করছে। সড়ক ব্যবহারকারী ও গাড়ি চালকরা আইনে প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে সহজেই নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’

আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, মৃত্যু কেবল সংখ্যা নয়, বরং যারা তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে তাদের জন্য এটা সারাজীবনের যন্ত্রণা। সেজন্য তিনি রোড ক্র্যাশ প্রতিরোধে গণমাধ্যম ও সচেতনতামূলক প্রচারণার ওপর জোর দেন।

সভায় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিগণ, প্রকৌশলী, নগর পরিকল্পনাবিদ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), ডিএমপি’র ট্রাফিক ঢাকা উত্তর অঞ্চল, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) প্রতিনিধি, বিআইজিআরএস-ঢাকার এনফোর্সমেন্ট কোঅর্ডিনেটর গোলাম হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।