রাজধানীর বহুল আলোচিত ও দ্রুত জনপ্রিয় পরিবহন ব্যবস্থা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ইউনিভার্সাল টিকেটিং সিস্টেম (ইউটিএস) চালুর লক্ষ্যে আহ্বানকৃত এই টেন্ডারকে ঘিরে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে।
টেন্ডারের প্রেক্ষাপট
গ্রাহক সেবার মান বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক মান অর্জনের লক্ষ্যে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ইউটিএস চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য গত ২১ জুলাই ২০২৫ বিকাল ৩টা পর্যন্ত দরপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৮টি কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে ২টি কোম্পানি জামানত বা বিড বন্ড না দেওয়ায় পরবর্তী মূল্যায়নের জন্য ৬টি কোম্পানি যোগ্য বলে বিবেচিত হওয়ার কথা ছিল।
অনিয়মের অভিযোগ
তবে অংশগ্রহণকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দাবি নির্ধারিত সময়সীমার পরও আরও ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়, যা প্রচলিত নিয়মের স্পষ্ট ব্যত্যয়। বিস্ময়করভাবে, এই অতিরিক্ত কোম্পানিগুলোর একটি আবার জামানত ছাড়াই টেন্ডার জমা করে।
এছাড়া অভিযোগ উঠেছে, একই প্রতিষ্ঠান ভিন্ন নামে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেছে। যেমন—এডিএন টেলিকম লিমিটেড সময়মতো দরপত্র জমা দেয়, আর এরই সহযোগী প্রতিষ্ঠান সহজ লিমিটেড পরে দরপত্র জমা করে। অথচ ২০২৩ সালের জুনে এডিএন টেলিকম লিমিটেড ১২ কোটি টাকায় সহজ লিমিটেডের ১০% শেয়ার ক্রয় করে। পিপিআর-২০০৮ ও টেন্ডারের ধারা অনুযায়ী এই ধরনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে অযোগ্য ঘোষণা করার বিধান থাকলেও উভয়কেই প্রক্রিয়ায় রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ।
প্রতিক্রিয়া ও আশঙ্কা
ঢাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে টেন্ডার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও শুদ্ধভাবে সম্পন্ন করতে হবে, যাতে দ্রুত ইউটিএস চালু করা যায়। অন্যথায় রাজধানীবাসীর প্রত্যাশিত সেবার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এদিকে অংশগ্রহণকারী একাধিক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, অনিয়ম অব্যাহত থাকলে তারা আইনগত লড়াইয়ে যাবে। এতে ইউটিএস বাস্তবায়ন দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতায় পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
দরপত্র অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (DMTCL) জেনারেল ম্যানেজার (স্টোর অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) সাব্বির আহমেদ বলেন,
“দরপত্র বাছাই প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি আমরা। আমি এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে অন্য আর কোনো কথা বলবো না। আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলি না।”
তার এমন মন্তব্যে বিতর্ক আরও বেড়েছে, কারণ স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় দূর না হয়ে বরং প্রশ্ন জোরদার হয়েছে।