ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন,জলাবদ্ধতা নিরসন, মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে কেসিসির বাজেট ঘোষণা।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ৭’শ ১৯ কোটি ৫০ ল ৩৬ হাজার টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। কেসিসি প্রশাসক বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন। একই সাথে তিনি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ৬ শ ১৮ কোটি ২৫ লক্ষ ৭ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেটও পেশ করেন। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৪ শ ৫৫ কোটি ৯৩ ল ৭৩ হাজার টাকা এবং ব্যয় ধরা হয়েছে ২ শ ৭৭ কোটি ৬৫ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। এছাড়া সরকারি বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১ শ ৩০ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা এবং বিশেষ প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১ শ ৩৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পটি শেষ হওয়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বরাদ্দ কম হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শরীফ আসিফ রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাজেট কাম একাউন্টস অফিসার মো: মনিরুজ্জামান।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কেসিসি প্রশাসক স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং জুলাই আন্দোলনে শহিদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বাজেট কোন প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের খতিয়ান নয় বরং এর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ভাবনা প্রতিফলিত হয়। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটও সেই ভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। খুলনাকে একটি শান্তি ও স্বস্তির নগরী হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এর জন্য নিজস্ব আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনার পাশাপাশি সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহযোগিতা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাজেটের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে প্রশাসক বলেন, এটি একটি উন্নয়নমুখী বাজেট। নতুন কোন কর আরোপ না করে বকেয়া পৌরকর আদায়ের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া নবনির্মিত স্থাপনার উপর প্রচলিত নিয়মে পৌরকর ধার্য্য, মার্কেট, দোকান, নতুন স্থাপনা নির্মাণ ও পার্কগুলিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে নিজস্ব আয়ের সম্প্রসারণ করাই আমাদের লক্ষ্য। এছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসন, ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া প্রতিরোধে মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও নগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবা সম্প্রসারণসহ স্থাপনাসমূহ রক্ষণা-বেক্ষণের ওপর এ বাজেটে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কেসিসি’র দাপ্তরিক কার্যক্রমের আধুনিকায়নসহ ধর্মীয় উপসনালয়ের উন্নয়ন এবং শহীদদের স্মরণে সৃত্মিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনাও এ বাজেটে নেয়া হয়েছে। বাজেটের সফল বাস্তবায়নে তিনি সকল শ্রেণি-পেশার নাগরিকের পরিপূর্ণ আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
বাজেট বর্ণনায় কেসিসি প্রশাসক বলেন, মাস্টার রোল ও আউটসোসিং কর্মকর্তা কর্মচারী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন ভাতা, নিজস্ব সংস্থাপন ব্যয় মিটিয়ে নিজস্ব তহবিল হতে উন্নয়ন খাতে ১১৪ কোটি ৮৯ ল ০৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যার মধ্য পূর্তখাত, বিএমডিএফ, অবকাঠামো তৈরি, সড়কবাতি, শিা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, সমাজ কল্যাণ, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, ভেটেরিনারি ও কঞ্জারভেন্সি, উন্নয়ন খাতে ১০০ কোটি ২৩ ল ০৫ হাজার টাকা, মেরামত ও রণাবেণ খাতে ১৪ কোটি ৬৬ ল টাকা এবং মূলধন খাতে ৭ কোটি ৯০ ল টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি), থোক ও বিশেষ বরাদ্দে চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। থোক বরাদ্দ থেকে পূর্ত খাতে ২৩ কোটি ৩২ ল টাকা, জরুরী পানি চাহিদা খাতে ৭০ ল টাকা, ভেটেরিনারী খাতে ৭০ ল টাকা, জনস্বাস্থ্য খাতে ৮ কোটি ৭২ ল টাকা এবং কঞ্জারভেন্সি খাতে ২১ কোটি ৫৬ ল টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় এডিপিতে ২টি প্রকল্পে ৭৫ কোটি ২৮ ল টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা চলতি বছরে পাওয়া যাবে।
চলমান প্রকল্পসমূহের বিবরণ তুলে ধরে কেসিসি প্রশাসক বলেন, খুলনা মহানগরীতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ৮’শ ২৩ কোটি ৭৯ ল ০৬ হাজার টাকার মধ্যে চলতি অর্থবছরে পাওয়া যাবে ২০ কেটি টাকা।  খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩’শ ৯৩ কোটি ৪০ ল ৬০ হাজার টাকা যার মধ্যে চলতি অর্থবছরে পাওয়া যাবে ৫৫ কোটি ২৮ ল টাকা।  খুলনা সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও তিগ্রস্থ রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শুরু হয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ হয়েছে এবং ১৫’শ কোটি টাকার খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এছাড়া দাতা সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, বিল এন্ড এএমপি মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জিআইজেড উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে সহযোগিতা করছে এবং বর্তমানে বিভিন্ন দাতা সংস্থার মাধ্যমে ১১টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ সকল প্রকল্পে ১’শ ৩৩ কোটি ১৮ ল ৬৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা শীঘ্রই পাওয়া যাবে বরে আশা করা যাচ্ছে। প্রকল্পগুলি হচ্ছে নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প-২, হেলদি সিটি খুলনা আরবান লীড প্রোগ্রাম, সাসটেইন্যাবল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং টু রিভিউস ইরিভারসেভেল পপুলেশন বাই প্লাস্টিক প্রকল্প, আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রকল্প, কাইমেট চেঞ্জ এডাপটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে-২, সাসটেনেবল আরবান ওয়াটার সাইকেল প্রকল্প, কোভিট-১৯ রিসপন্স এন্ড রিকভারী প্রকল্প, স্ট্রেনদেনিং হারনেস এন্ড ইনটিগ্রেটি ফর ট্রান্সমিটার থ্রো ইউথ কাউন্সিল ইন বাংলাদেশ প্রকল্প, সার্পোটেড কাইমেট স্মার্ট ওয়াশ ইনিশিয়েটিভ বাই ইউনিসেফ, জলবায়ু উদ্ববাস্তুদের সমতা জীবনমান বৃদ্ধি ও উন্নয়ন প্রকল্প এবং লিভেবল এন্ড ইনকুসিভ সিটিস ফর অল (এলআইসিএ)।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এ্যাড. শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, জামায়াতে ইসলামী-খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, সাবেক কাউন্সিলর মো: হাফিজুর রহমান মনি, বৃহত্তর খুলনা উনয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান, সিয়ামের পরিচালক এ্যাড.মোঃ মাছূম বিল্লাহ, নাগরিক ফোরাম-খুলনার মহাসচিব ইকবাল হাসান তুহিন, বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসীর সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান খোকন,জুলাই শহিদ শেখ মো: সাকিব রায়হানের পিতা শেখ মো: আজিজুর রহমানসহ সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ছাত্র প্রতিনিধি, নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, গণমাধ্যমকর্মী ও কেসিসি কর্মকর্তাগণ বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Share This News