জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের সুযোগে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বাংলাদেশের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর এবং দুই দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শুক্রবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তোবগে এই যুগান্তকারী প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এ উদ্যোগ বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে নতুন মাত্রা দেবে।”
অর্থনৈতিক অঞ্চল সংযোগের নতুন দিগন্ত
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী একটি উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব তুলে ধরেন যা দুই দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে নতুনভাবে সাজাতে পারে। তিনি জানান, ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘গেলেপু মাইন্ডফুলনেস সিটি (জিএমসি)’কে কুড়িগ্রামে ভুটানি বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দকৃত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে যুক্ত করা গেলে উভয় দেশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এই উদ্ভাবনী প্রস্তাবকে উষ্ণ সম্বর্ধনা জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশ ও ভুটান উন্নত যোগাযোগ, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।”
বহুমুখী সহযোগিতার পরিকল্পনা
বৈঠকে একাধিক খাতে সহযোগিতার বিষয় আলোচিত হয়েছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ধর্মীয় পর্যটন প্রসারে তার সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশি বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ভুটানে যেতে পারেন, যা পর্যটন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
জ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্রে তোবগে ফাইবার অপটিক সংযোগ স্থাপনে বাংলাদেশের সহযোগিতা কামনা করেন। একইসাথে তিনি জানান, ভুটান তাদের বিশাল জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনাকে বাংলাদেশের জন্য কাজে লাগাতে চায়।
ওষুধশিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগের কথা উঠে আসে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার ভুটানের ওষুধশিল্পে বাংলাদেশী বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে আগ্রহী।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমর্থন
দুই নেতা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা করেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়তা দেন যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ আয়োজিত পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে তার দেশ অংশগ্রহণ করবে।
ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা ও সম্মান
বৈঠকে ব্যক্তিগত মর্যাদা ও সম্মানের একটি হৃদয়স্পর্শী মুহূর্তও ছিল। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে তোবগে বলেন, বাংলাদেশ এখন “সঠিক নেতৃত্বে রয়েছে।” তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে তার ব্যক্তিগত “আদর্শ” উল্লেখ করে শ্রদ্ধাভরে “মাই প্রফেসর” সম্বোধন করেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি থিম্পুতে উদ্বোধন হওয়া বাংলাদেশের নতুন চ্যান্সারি ভবনের নকশারও ভূয়সী প্রশংসা করেন, যা “হিমালয়ের পাদদেশে বঙ্গোপসাগর” থিমে নির্মিত হয়েছে।
আসন্ন সফরের পরিকল্পনা
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের সৌজন্যমূলক আমন্ত্রণ জানান। তোবগে আমন্ত্রণ সানন্দে গ্রহণ করে জানান, তিনি সম্ভবত আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগেই এ সফর সম্পন্ন করবেন।
এই ঐতিহাসিক বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে, যা দুই দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সূত্র: বাসস