জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সারাদেশব্যাপী সিয়াম এর আয়োজনে শুরু হয়েছে “স্বাস্থ্যকর বাংলাদেশ যাত্রা”। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, সিয়াম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, বেলা, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ ১৭টি জেলার বেসরকারি সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে এই কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।
টেকনাফ-তেতুলিয়া সাইকেল পরিভ্রমণ
গত ২৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ তরুণ টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত ১৭টি জেলায় সাইকেলে পরিভ্রমণ করে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি তুলে ধরছেন।
আয়োজকরা বলছেন, এই প্রস্তাবনাসমূহ বাস্তবায়ন করা হলে দেশের জনগণের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে এবং সার্বিক জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

৮ দফা দাবির বিস্তারিত কারণ ও যৌক্তিকতা
১. তামাক নিয়ন্ত্রণ জোরদারকরণ তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার রোগ ও মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বর্তমানে দেশে তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। একইসাথে দেশে অশঙ্কাজনকভাবে তামাক চাষ বেড়ে যাওয়ায় কৃষি জমির অপব্যবহার হচ্ছে। এজন্য বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধন, খসড়া তামাক চাষ নীতি প্রণয়ন এবং আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে নতুন তামাক কোম্পানির অনুমোদন বন্ধ করা জরুরি।
২. পরিবেশ আদালতের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পরিবেশ দূষণ রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। বায়ু, পানি ও মাটি দূষণের কারণে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় বিদ্যমান আইনি ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত। তাই পরিবেশ আদালত আইন ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে নাগরিকদের মামলা করার অধিকার প্রদান এবং প্রতি জেলায় পরিবেশ আদালত স্থাপন করা প্রয়োজন।
৩. শরীরচর্চার পরিবেশ সৃষ্টি শরীরচর্চার উপযুক্ত জায়গা না থাকায় যুবকরা কম কায়িক পরিশ্রম করছে, যার ফলে স্থূলতা, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। শরীরচর্চার পরিবেশ নিশ্চিত করতে মাঠ, পার্ক ও গণপরিসর তৈরি ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা এবং বিভিন্ন বয়সের গোষ্ঠীর জন্য শরীরচর্চার পরিবেশ নিশ্চিতে বিভিন্ন সংস্থার জন্য গাইডলাইন প্রণয়ন করা অপরিহার্য।
৪. রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ বর্তমান স্বাস্থ্য বাজেটে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উপেক্ষিত থাকায় চিকিৎসা খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিরোধই সর্বোত্তম চিকিৎসা এই নীতি অনুসরণে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জের অর্থে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন করা প্রয়োজন।
৫. নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব যাতায়াত বর্তমান যাতায়াত ব্যবস্থায় পথচারী ও সাইকেল চালকদের নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। বায়ু দূষণ কমানো ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব যাতায়াত নিশ্চিতে পথচারীদের অগ্রাধিকার নীতিমালা প্রণয়ন এবং সাইকেলের জন্য পৃথক লেন তৈরি করা জরুরি।
৬. নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ ভেজাল ও দূষিত খাদ্য গ্রহণের কারণে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নিরাপদ খাদ্য আইনের কঠোর বাস্তবায়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক।
৭. নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ফলে ভূপরিস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে এবং আর্সেনিক দূষণের ঝুঁকি বাড়ছে। নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার হ্রাস এবং জলাধার সংরক্ষণের মাধ্যমে ভূপরিস্থ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
৮. পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ স্বল্প আয়ের মানুষের পুষ্টিহীনতার কারণে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে স্বল্পমূল্যে তাজা শাকসবজির যোগান নিশ্চিতে রেল, নৌ ও সড়ক পরিবহনের সমন্বয় নিশ্চিত করা এবং নগর কৃষির ব্যবস্থা করা অপরিহার্য।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিবেশ রক্ষায় সরকারি নীতিমালার পরিবর্তন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে।