শনিবার থেকে শুরু হওয়া জুম্ম ছাত্র-জনতার অবরোধ তৃতীয় দিনেও অব্যাহত রয়েছে খাগড়াছড়িতে। একই সঙ্গে জারি থাকা ১৪৪ ধারায় জেলার ভেতরে-বাইরে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও পর্যটকরা।
খাগড়াছড়ি জেলার সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙামাটিসহ সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙাসহ ৯টি উপজেলার সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র জরুরি সেবার যানবাহন চলতে পারছে।
শহরের চেঙ্গী স্কয়ার, শাপলা চত্বর, কলেজ গেইট, স্বনির্ভর এবং জিরো মাইলে সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী পোস্ট বসিয়ে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। ১৪৪ ধারার মধ্যে চলাচলকারী প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পর্যটকদের দুর্ভোগ
শুক্রবার খাগড়াছড়িতে বেড়াতে এসে আটকা পড়েছেন শত শত পর্যটক। গাড়ি চলাচল না থাকায় তারা সাজেক যেতে পারছেন না, আবার ঢাকায় ফিরতেও পারছেন না।
সোমবার সকালে শাপলা চত্বরে কথা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. কামাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমরা ২৩ জন শনিবার ভোরে খাগড়াছড়িতে পৌঁছাই। এরপর থেকে শহরের মধ্যে একরকম বন্দিই আছি। অবরোধের কারণে বাড়ি ফিরতে পারছি না। আমাদের মতো আরও অনেকেই এখানে আটকা পড়েছেন।”
গুইমারায় সংঘর্ষ, নিহত ৩ ।
রোববার খাগড়াছড়ির গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন পাহাড়ি নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে।
সংঘর্ষে একজন মেজরসহ ১৩ জন সেনাসদস্য এবং গুইমারা থানার ওসিসহ তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে অবরোধ শিথিলের আহ্বান
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অবরোধ কর্মসূচি শিথিল করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি। রোববার রাতে কমিটির খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি অশোক মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক তমাল দাশ লিটন এক যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, “রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আমাদের সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এই উৎসবকে আনন্দঘন পরিবেশে এবং অংশগ্রহণমূলক ধর্মীয় পবিত্রতার সঙ্গে পালন করার জন্য চলমান অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করার জন্য জুম্ম ছাত্র-জনতার নেতাকর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।”
পূজা উদযাপন কমিটি জেলা সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত প্রকৃত দোষীদের কঠিনতম শাস্তির দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে তারা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের জন্য চলমান অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার আশু সমাধানের আহ্বান জানান।
কী কারণে এই অবরোধ?
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে জুম্ম ছাত্র-জনতা। ঘটনার বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শনিবার থেকে তারা এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে।
তবে অবরোধ চলমান থাকায় সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের পাশাপাশি ধর্মীয় উৎসব পালনেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।