গতিসীমা ও আইন মেনে গাড়ি চালানোর আহবান

ডিএমপি কর্মকর্তাদের যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান

১৬ অক্টোবর ২০২৫, ঢাকা ।।

ঢাকায় গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যদের দক্ষতাবৃদ্ধির লক্ষ্যে গতকাল ও আজ দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) এর আওতায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপ (জিআরএসপি) এ প্রশিক্ষণ আয়োজন করে।

সকালে ঢাকার একটি হোটেলে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন ডিএমপি’র অতি. পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ড. মো. জিল্লুর রহমান। তিনি সড়ক পরিবহন আইন, ট্রাফিক সিস্টেম ও গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা বাস্তবায়নে পুলিশ অফিসারদের ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি গাড়ি চালকদের গতিসীমা ও ট্রাফিক নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, গাড়ি চালক, মালিকসহ সড়ক ব্যবহারকারী সকল নাগরিক যদি সহায়তা করেন তাহলে শহরে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।

বিআইজিআরএস কোঅর্ডিনেটর ও অতিরিক্ত সচিব (অব.) মো. আবদুল ওয়াদুদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডিএমপি’র যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-ঢাকা উত্তর) সুফিয়ান আহমেদ, জিআরএসপি’র সিনিয়র রোড পুলিশিং উপদেষ্টা মাইকেল ফিল্যান্ড ও পল সিমকক্স বক্তব্য রাখেন।

এ প্রশিক্ষণে পুলিশ কর্মকর্তাদের রোড ক্র্যাশ প্রতিরোধে আইন প্রয়োগের ভূমিকা, রোড ক্র্যাশের ক্ষেত্রে যানবাহনের উচ্চ গতি ও গতি নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি এবং রাস্তার পাশের চেকপয়েন্টগুলির নিরাপদ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির উপর আলোচনা করেন। এ সময় তারা গতির কারণে বিভিন্ন ঝুঁকি অডিওভিজ্যুয়াল চিত্র, গ্রাফ ও বিভিন্ন দেশের গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন। প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন জিআরএসপি’র সিনিয়র রোড পুলিশিং উপদেষ্টা মাইকেল ফিল্যান্ড ও পল সিমকক্স।

প্রসঙ্গত, দেশে রোড ক্র্যাশে মৃত্যু ও হতাহত কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দেশের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহন ভেদে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ে, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি হবে ৪০ কিমি/ঘণ্টা, ও অন্যান্য অধিকাংশ সড়কে ৩০ কি.মি./ঘন্টা নির্ধারণ করেছে। তবে, শহরে মোটর সাইকেলের সর্বোচ্চ গতি ৩০ কি.মি./ঘন্টা।

এ প্রশিক্ষণ সমন্বয় করেন বিআইজিআরএস-ঢাকা ইনিশিয়েটিভ কোঅর্ডিনেটর মো. আবদুল ওয়াদুদ ও এনফোর্সমেন্ট কো-অর্ডিনেটর গোলাম হোসেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর টেকনিক্যাল এডভাইজর আমিনুল ইসলাম সুজন, ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট এর কনসালটেন্ট ফারজানা ইসলাম তমা, বিআইজিআরএস এর ট্রান্সপোর্ট কোর্ডিনেটর রেজাউর রহমান ও সার্ভিলেন্স কোঅর্ডিনেটর ডা. তানভীর ইবনে আলী প্রমুখ।

দুদিনের প্রশিক্ষণে ডিএমপি’র বিভিন্ন ইউনিটের ট্রাফিক সার্জেন্ট, উপ-পরিদর্শক, পুলিশ পরিদর্শক, সহকারী/উপ-পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার ৬০ জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বিকালে সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের সনদপত্র প্রদান করেন ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ড. মো. জিল্লুর রহমান। এ সময় বিআইজআরএস ইনিশিয়েটিভ কোঅর্ডিনেটর মো. আবদুল ওয়াদুদ, ডিএমপি’র যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-ঢাকা দক্ষিণ) মোহাম্মদ এনামুল হক ও যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-ঢাকা উত্তর) সুফিয়ান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গতকাল এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ডিএমপি কমিশনার এসএম সাজ্জাত আলী, এনডিসি। এ সময় তিনি বলেন, সড়কে মেয়াদোত্তীর্ণ যান ও অদক্ষ চালক, বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যান একসঙ্গে চলাচল, লেন না মানা, যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা, রাতের বেলায় সড়কে পর্যাপ্ত আলোর অভাব, ট্রাফিক আইন ও ট্রাফিক সিগনাল অমান্য করা, অনিরাপদ রোড ডিজাইন এবং অতিরিক্ত গতি বা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ইত্যাদি কারণে মানুষ মারা যায়। বিশেষ করে, অতিরিক্ত গতি বা বেপরোয়া গতি রোড ক্র্যাশ ও সড়কে অকালমৃত্যু ও পঙ্গুত্বের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তাই, সড়ক ও গাড়ির ধরণ অনুযায়ী যে গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে তা মেনে গাড়ি চালালে রোড ক্র্যাশের ঝুঁকি কমে আসবে। অর্থাৎ গতিসীমা মানলে জীবন বাঁচবে। এছাড়া নিরাপদ যান ও নিরাপদ রোড ডিজাইন এবং ট্রাফিক সিগনালসহ আইন মেনে চললে সড়ক নিরাপদ হবে।