ঢাকার সড়কে গতিসীমা মেনে গাড়ি চালানোর আহবান

 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সড়কে মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা অনুযায়ী নির্ধারিত গতিসীমা মেনে গাড়ি চালানোর জন্য চালক-মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। ডিএনসিসি’র কর্তৃক ঢাকা উত্তর সিটি এলাকর সড়কে গতিসীমা বাস্তবায়ন বিষয়ক মাসব্যাপী ক্যাম্পেইনের প্রাক্কালে আজ এক বার্তায় তিনি এ আহবান জানান।

ডিএনসিসি প্রশাসক বিশ্বব্যাপী গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, সড়কে যানবাহনের গতি যত বেশি রোড ক্র্যাশ ও মৃত্যুঝুঁকি তত বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৭ সালে ‘জীবন বাঁচান-গতি কমান’ প্রকাশনায় উল্লেখ করেছে, গড়ে ৫% গতি কমালে রোড ক্রাশের ঝুঁকি ৩০% কমে। বিশ্ব ব্যাংক ২০২১ সালে ‘মোবিলিটি এন্ড কানেক্টিভিটি সিরিজ’ -এ দক্ষিণ কোরিয়ার শহরাঞ্চলে গতি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতি কমানোর কারণে সব ধরণের সড়ক ব্যবহারীদের অকালমৃত্যু প্রায় ২০% এবং পথচারীদের মৃত্যু ৩৯%কমেছে।

ডিএনসিসি প্রশাসক চালকদের সতর্ক করে বলেন, সড়কে অতিরিক্ত গতি দুর্গতির কারণ। এতে অনেক মানুষের জীবনের গতি চিরতরে থেমে যায়। তিনি বলেন, একটি যান যত বেশি গতিতে চলবে সেটি থামানোর জন্য তত বেশি দূরত্ব প্রয়োজন। যেমন: ৫০ কি.মি. গতিতে চলমান গাড়ি থামাতে ১৪ মিটার দূরত্ব প্রয়োজন। শহরের সড়কে বিভিন্ন ধরণ ও গতির যান চলে, পথচারী সড়ক ব্যবহার করে। তাই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শহরের সড়কে ৩০ কি.মি. গতিা সুপারিশ করেছে।

ডিএনসিসি প্রশাসক আরও বলেন, ডিএনসিসি ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটির সাথে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সড়ক নিরাপত্তায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ও মোড় চিহ্নিত করছে। ওয়াল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের সহায়তায় এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের নিরাপদ ডিজাইন করা হচ্ছে। ডিএমপি ও গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপ-এর সঙ্গে সড়ক নিরাপত্তায় বিদ্যমান আইনকানুন বাস্তবায়নে পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হচ্ছে। জনহপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল ইনজ্যুরি রিসার্চ ইউনিট ও সেন্টার ফর ইনজ্যুরি প্রিভেনশন রিসার্চ বাংলাদেশ এর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সড়কে মানুষের আচরণগত জরিপ করা হচ্ছে। ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের সহায়তায় সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ আয়োজন ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর কারিগরি সহায়তা আমরা একটি মাসমিডিয়া ক্যাম্পেইন শুরু করেছি।

তিনি জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ঢাকা উত্তরে সব ধরনের যানের ২৩% নির্ধারিত গতিসীমা লঙ্ঘণ করছে। লোকাল ও কালেকটরেট রাস্তায় ২৯% যান অতিরিক্ত গতিতে চলে। ছুটির দিনে গতিসীমা লঙ্ঘণ করার হার বেশি। এছাড়া, মোটর সাইকেলের মধ্যে গতিসীমা লঙ্গণের হার সর্বাধিক (৫১%)। এছাড়া, মোটর সাইকেলে মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার করার হারও কম। গতি ও মানহীন হেলমেট মোটর সাইকেল ব্যবহারকারীদের মৃত্যু ও সম্পদ হানির ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে।

পরিশেষে তিনি নগরবাসীদের সচেতনভাবে সড়ক ব্যবহার করার অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে পথচারীদের ফুটপাথে হাঁটা ও নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে সড়ক পার হওয়া, মোটর সাইকেল ব্যবহারকারীদের গতিসীমা মানা ও মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার এবং কার-বাসসহ মোটর যান চালকদের শহরের সড়কে গতিসীমা ও ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালানোর অনুরোধ জানান। এতে ধীরে ধীরে ঢাকার সড়ক নিরাপদ হয়ে উঠবে বলে তিনি মনে করেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রণীত হয়েছে যান্ত্রিক যানের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা ২০২৪- এ শহরের সড়কে যানবাহনের গতি নির্ধারণ করা হয়েছে:

  • শহরের অভ্যন্তরে ১০.৩ মিটার প্রস্থ, কমপক্ষে ৬ লেনে বিভক্ত, ফুটপাথ ও সড়ক পারাপারের ব্যবস্থা রয়েছে – এমন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং অভ্যন্তরীণ সড়কে কার, মাইক্রো, জিপ ইত্যাদি হালকা মোটর যান, বাস-মিনিবাস ইত্যাদি মাঝারি ও ভারী যানের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৪০ কি.মি./ঘন্টা এবং ট্রাক, মিনিট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ইত্যাদি মালবাহী ভারী যান ও মোটর সাইকেলের সর্বোচ্চ গতি ৩০ কি.মি./ঘন্টা;
  • শহর এলাকার প্রাইমারি আরবান সড়ক, অবিভক্ত ও দুই লেনবিশিষ্ট সড়কে কার, মাইক্রো, জিপ ইত্যাদি হালকা মোটর যানের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৪০ কি.মি./ঘন্টা এবং মোটর সাইকেলের গতি ৩০ কি.মি./ঘন্টা;
  • শহরের অভ্যন্তরীণ সংকীর্ণ/শেয়ার ও অন্যান্য সড়কে মোটর গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা ৩০ কি.মি./ঘন্টা এবং মোটর সাইকেলের গতি ২০ কি.মি./ঘন্টা নির্ধারণ করা হয়েছে।