যুব সমাজকে নেশায় আসক্ত করার মতো ক্ষতিকর পণ্য ‘নিকোটিন পাউচ’ উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়ায় বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটির (বেজা) সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাডভোকেটসের (বিটিসিএ) যৌথ উদ্যোগে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেজা কার্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কে ‘রোগ সৃষ্টিকারী নিকোটিন পাউচ কারখানার অনুমোদন বাতিল করা হোক’ শীর্ষক এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।
এতে বক্তারা বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত শুধু হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপন্থী নয়, বরং সরকারের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিরও সম্পূর্ণ বিপরীত।’
‘নিকোটিন পাউচ যুব সমাজের জন্য নতুন নেশার ফাঁদ’
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ‘নিকোটিন পাউচ হলো তামাক কোম্পানিগুলোর নতুন কৌশল, যা ধূমপানের বিকল্প নামে তরুণদের আসক্ত করছে। মুখে রেখে ব্যবহৃত এই পণ্য দ্রুত নেশা তৈরি করে এবং এতে থাকা নিকোটিন মুখ, মাড়ি, ফুসফুস, লিভার ও কিডনির ক্ষতি করে।’
বিটিসিএ’র আহ্বায়ক ইকবাল মাসুদ বলেন, ‘একটি নেশা থেকে মুক্ত করতে গিয়ে আরেকটি নেশায় আসক্ত করা কোনোভাবে জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। নিকোটিন পাউচ কোনোভাবেই নিরাপদ নয়, বরং এটি ধূমপানের মতোই ক্ষতিকর।’
তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক ফারাহানা জামান লিজা বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে যে, নিকোটিন পাউচ অত্যন্ত আসক্তিকর। ফলে নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, রাশিয়া ও ফ্রান্সসহ অন্তত ৩৪টি দেশ এ পণ্য নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমোদন বাতিল করা উচিত।’
বক্তারা স্মরণ করিয়ে দেন, ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে, দেশে নতুন কোনও তামাক কোম্পানি বা কারখানার অনুমোদন দেওয়া যাবে না। বরং বিদ্যমান তামাক শিল্পকে বিকল্প খাতে রূপান্তরের নির্দেশনা ছিল।
বক্তাদের ভাষায়, বেজার অনুমোদন আইনের শাসন, সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের জনকল্যাণমূলক দায়িত্ব এবং আদালতের নির্দেশনার সরাসরি লঙ্ঘন।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ সাগুফতা সুলতানা বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত শুধু আইনি নয়, নৈতিকভাবেও অগ্রহণযোগ্য। সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে ৩৫টি মন্ত্রণালয় যে অঙ্গীকার করেছে, এই অনুমোদন তা সম্পূর্ণভাবে দুর্বল করে দেবে।’
বেজা চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি
প্রতিবাদ শেষে আয়োজক সংগঠনগুলো বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বরাবর চার দফা দাবিনামা পেশ করে। দাবিগুলো হলো— ফিলিপ মরিস কোম্পানিকে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে; আদালতের রায় ও সংবিধান লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা বা প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে; ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যবিরোধী কোনো পণ্য উৎপাদনের অনুমোদন প্রদান নিষিদ্ধ করতে হবে; এবং তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বেজাকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে।
‘নিকোটিন পাউচ’ হলো ধোঁয়াবিহীন তামাকজাতীয় পণ্য, যা মুখে রেখে ব্যবহার করা হয় এবং এতে উচ্চমাত্রার নিকোটিন থাকে। এটি দ্রুত আসক্তি সৃষ্টি করে ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে মারাত্মক ক্ষতি ঘটায়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ধূমপান কমানোর নামে এ ধরনের বিকল্প পণ্য প্রচলন আসলে নতুন প্রজন্মকে তামাকাসক্তির নতুন ফাঁদে ফেলছে।