খুলনাকে ‘স্বাস্থ্যকর শহর’ গড়ার উদ্যোগে খুলনা ও আশপাশের এলাকায় শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধিসহ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সচেতনতায় অবদান রাখায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন (সিয়াম)SEIAM (Social & Environmental Increasing Analysis Movement) বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার সম্মাননা পেয়েছে। খুলনা সিটি করপোরেশন, ও NCDC এর সহায়তায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর পরিচালিত প্রকল্প, হেলদি সিটি ইনিশিয়েটিভ- এর আওতায় ‘স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা বিভাগ’ ক্যাটগরিতে, খুলনা ও দেশব্যাপি শারীরিক কার্যকলাপ প্রচারে সিয়াম এর উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ এই সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে। খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোখতার আহমেদ এর নিকট হতে ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ইং তারিখে খুলনার একটি অভিজাত হোটেলে খুলনা সিটি করপোরেশন, NCDC ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর যৌথ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা গ্রহন করেন সিয়ামের র্নিবাহী পরিচালক এড.মোঃ মাছূম বিল্লাহ সহ কর্মকর্তা ও স্বেছাসেবীগন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন অপরিহার্য। সভায় স্বাগত বক্তৃতা করেন কেসিসি’র চীফ প্লানিং অফিসার আবির উল জব্বার এবং সঞ্চালনা করেন প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার আসিফ আহমেদ। কেসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শরীফ শাম্মীউল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. অপর্ণা বিশ্বাস, বিটিসিএল-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক তারিকুল ইসলাম, ওজোপাডিকোর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জ্যোতিষ চন্দ্র রায়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আশিক উর রহমান, কুয়েটের প্রফেসর ড. তুষার কান্তি রায় ও ড. মনজুরুল মোর্শেদসহ কমিটির সদস্যবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সিয়াম দীর্ঘদিন ধরে “স্বাস্থ্যকর বাংলাদেশ যাত্রা”, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ, কার্বন-ফ্রি পরিবেশ, বিষমুক্ত খাদ্য, সাইকেল রেলী, ম্যারাথন, মাঠ, পার্ক ও জলাশয় রক্ষাসহ স্বাস্থ্যকর নগরী তৈরীতে বিভিন্ন ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছে। সংগঠনটির লক্ষ্য হলো; নাগরিকদের সচেতন করে এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যসুরক্ষা, পরিবেশ রক্ষা এবং সক্রিয় জীবনধারা হবে সমাজের স্বাভাবিক আচরণ। তাদের প্রচারণার অংশ হিসেবে ২৫ সেপ্টেম্বর টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত “স্বাস্থ্যকর বাংলাদেশ যাত্রা” অনুষ্ঠিত হয়, যার মাধ্যমে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে তামাকমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারার প্রতি উদ্বুদ্ধ করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ২০২০ সালে খুলনাকে ‘স্বাস্থ্যকর শহর প্রকল্পে’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে সিয়াম শহরজুড়ে কাজ করেছে- সাইকেল রেলীর মাধ্যমে ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি প্রমোট করা, সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে কাজ করা, জলাশয়-পুকুর সংরক্ষণে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করা, ও মাঠ-পার্ক রক্ষার দাবিতে সচেতনতা বৃদ্ধি এসব উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম। সংগঠনটির এসব কাজ Healthy City Khulna-র উদ্দেশ্যের সঙ্গে সরাসরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
খুলনার বর্তমান পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সিয়াম এর মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কার্যক্রম শহরকে অধিক মানবিক ও স্বাস্থ্যবান্ধব করার প্রচেষ্টায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। সরকারি সংস্থার পাশাপাশি নাগরিক সংগঠনের এই অবদানই খুলনাকে একটি স্বাস্থ্যকর, পরিচ্ছন্ন ও টেকসই নগর গঠনের উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিচ্ছে। পরিবেশ রক্ষা, জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোই ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যকর নগর গঠনে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। খুলনাকে একটি সুস্থ, নিরাপদ ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে সিয়াম এর এই স্বীকৃতি তাই উল্লেখযোগ্য এক উদাহরণ।