গ্রেফতার কি?
কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যখন কোন অভিযোগ করা হয়,তখন পুলিশ অফিসার বা কোর্টের আদেশ অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিচারের সম্মুখীন করার যে প্রক্রিয়া তাকে গ্রেফতার বলে।
ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৪৬ ধারাতে গ্রেপ্তারের বিধান কি?
ফৌজদারী কার্যবিধির গ্রেফতারের বিধান মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১)প্রাথমিকভাবে প্রাথমিকভাবে মৌখিক গ্রেপ্তারের বিধান।
২)অভিযুক্ত ব্যক্তির শরীর স্পর্শ করে গ্রেফতারের বিধান।
৩)গ্রেপ্তার করতে গিয়ে কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানোর বিধান।
মৌখিক গ্রেপ্তারের বিধানঃ
যে সকল ব্যক্তি সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
যেমন প্রথম শ্রেণীর নাগরিক,বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী,রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক মন্ডলী এবং সরকারি/বেসরকারি কর্মচারী কর্মকর্তাগণ কে আটকের পূর্বে মৌখিকভাবে পুলিশ অফিসার বলে থাকেন, যে আপনাদের বিরুদ্ধে বা আপনার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ রয়েছে এবং আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে। যদি মৌখিকভাবে বলার পরে উক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ পুলিশের সাথে থানায় যেতে ইচ্ছুক হয়, তবে তাকে তার দেহ স্পর্শ করে গ্রেফতার করা যাবে না বা তাকে হাত কড়া পড়ানো যাবে না।
এটা অভিযুক্ত ব্যক্তির এক ধরনের মানবিক অধিকার।
অভিযুক্ত ব্যক্তির শরীরে স্পর্শ করে গ্রেফতার করার বিধানঃ
যখন কোন ব্যক্তিকে মৌখিকভাবে গ্রেপ্তার করা যায় না অথবা যাকে মৌখিকভাবে বলার পরেও পুলিশের সাথে যেতে চায়না, তখন উক্ত ব্যক্তিকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য যে পরিমাণ রেসিস্টেন্স করা দরকার তা করে তাকে গ্রেফতার করতে পারবেন।
অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা অবারিত ক্ষমতা এক্সারসাইজ করতে পারেন উক্ত ব্যক্তিকে থানা হেফাজতে নেওয়ার জন্য।
অনেক সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশের গ্রেফতারি পরোয়ানা এড়ানোর জন্য পালায়োনের চেষ্টা করেন, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা উক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির পলায়নকে বাধা দেওয়ার জন্য যে পরিমাণ রেসিস্টেন্স বা বাধা দেওয়া উচিত একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা সেই পরিমাণ বাধা দিয়ে এরেস্ট করতে পারবেন।
কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের দণ্ডিত ব্যতীত অন্য কোন অপরাধে অভিযুক্ত হয় তাহলে তাকে গ্রেপ্তারের সময় তার মৃত্যু ঘটানো যাবেনা।
গ্রেফতার করতে গিয়ে মৃত্যু ঘটানোর বিধানঃ
যখন কোন ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দণ্ডিত এমন কোন অভিযোগে অভিযুক্ত হয় তখন উক্ত ব্যক্তি গ্রেফতার সময় পুলিশ চাইলে মৃত্যু ঘটাতে পারে। তবে সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে উক্ত ব্যক্তি গ্রেফতারি পরোয়ানা এড়ানোর জন্য এবং পুলিশের সাথে সংঘাতে জড়িয়েছে।
ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৬ ধারার সমালোচনাঃ
উক্ত ধারাতে একজন মহিলাকে কিভাবে গ্রেফতার করতে হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাছাড়া গ্রেপ্তারের সময় অভিযুক্তকে কোন আঘাত করা যাবে কিনা বা গেলে কি পরিমান আঘাত করা যাবে উক্ত ধারাতে তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি।
এখানে আইনের একটি অস্পষ্টতা রয়েছে যা পুলিশের দায়িত্ব রত কর্মকর্তা গন গ্রেফতার করতে গিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে অবিচার করেন।
বিনা ওয়ারেন্টে আটকৃত ব্যক্তিদের আদালতে প্রেরনের বিধানের সমালোচনাঃ
পুলিশ অফিসার যখন সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ৫৪ ধারা ৫৫ ধারা ৫৭ ধারা এর শর্ত মতে কোন ব্যক্তিকে আটক করেন, তখন আটককৃত ব্যক্তিকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৬০ এবং ৬১ ধারার বিধান মতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে প্রেরণ করতে হবে। কিন্তু ৬০ ধারায় আইনের অস্পষ্টতার কারণে উক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে সঠিক সময়ে আদালতে প্রেরণ করা হয় না এবং তাকে পুলিশ হেফাজতে রেখে তার মৌলিক অধিকার কে খর্ব করে।
আবার ৬১ ধারায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে বা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশের হেফাজতে নিয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ এর জন্য ১৬৭(২) ধারায় রিমান্ড চাইতে পারে। যা প্রকৃতপক্ষে অভিযুক্ত ব্যক্তির বা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। কারণ কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ সুনির্দিষ্ট না হলে তাকে রিমান্ডে নেওয়াটা সাংবিধানিক আইনের পরিপন্থি। অর্থাৎ রিমান্ডে যদি প্রমাণ হয় যে তার বিরুদ্ধে আসলেই কোন অভিযোগ নাই শুধুমাত্র সন্দেহের বসবর্তি হয়ে থাকে ধরা হয়েছে।তাহলে তার সাথে যে অবিচার হবে তা কোনভাবেই ক্ষতিপূরণ দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়।
সুতরাং ৬০ ও ৬১ ধারার বিধানটিও সমালোচনার বাইরে নয়।
মন্তব্যঃ
যেহেতু সংবিধানের ৩৩ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গ্রেফতার এর থেকে মুক্তি পাওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তির একটি মৌলিক অধিকার। সুতরাং সকল ব্যক্তিকে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনের বিধানের মধ্য থেকে সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সঠিক এবং ন্যায় পন্থায় বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। অন্যথায় আইন থাকবে কিন্তু ন্যায় বিচারের পথটি রুদ্ধ হবে।
তথ্য সংগ্রহ ও লেখক ঃ শেখ জোবায়ের হোসেন
এল এল বি (অনার্স)এল এল এম (মাস্টার্স) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
অ্যাডভোকেট,খুলনা জজ কোর্ট,খুলনা।