আগামীকাল (শুক্রবার) জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সনদকে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপরেখা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে সব রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষরের মাধ্যমে একটি “জাতীয় সনদ” গঠনের আশা করা হচ্ছে। তবে শেষ মুহূর্তেও বেশ কিছু ইস্যুতে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়নি।
দলগুলোর মধ্যে কেউ কেউ সনদে স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আবার কেউ কেউ “নোট অব ডিসেন্ট” (অসন্তোষের নোট) যুক্ত করে শর্ত দিয়েছে। কয়েকটি দল এখনো সিদ্ধান্ত নেননি তারা অংশ নেবে কি না।
দুই দিনের ইতালি সফর শেষে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় ফেরেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিকেলে তিনি ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,
“আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর নির্বাচন হোক। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই ঐকমত্য একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বৈঠকে বলেন,
“আমরা চাই রাষ্ট্রের ভারসাম্য অটুট থাকুক। প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক যেন সুস্থ থাকে — সেটিই আমাদের অগ্রাধিকার।”
বিএনপি জানিয়েছে, তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে তবে তাদের নোট অব ডিসেন্ট উল্লেখ রাখতে হবে। দলটি স্পষ্ট করেছে, “জুলাই সনদ স্বাক্ষরের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের সরাসরি সম্পর্ক নেই”।
অন্যদিকে, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন,
“আমরা সনদে স্বাক্ষর করব, তবে মতানৈক্যগুলো কমিয়ে আনতে হবে।”
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গণভোট ইস্যুতে বলেন,
“গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে করা বাস্তবসম্মত নয়। আগে গণভোট, পরে নির্বাচন হওয়াই উচিত।”
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান জানান,
“আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব এবং চাই গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন এক দিনেই হোক। যারা স্বাক্ষর করবে না, তারা জাতির কাছে দায়ী থাকবে।”
বাম গণতান্ত্রিক জোটের পাঁচটি দল — বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী), সিপিবিসহ — জানিয়েছে তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না। তাদের অভিযোগ, “যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, সেগুলোও সনদে রাখা হচ্ছে।”
এনসিপি সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন,
“গণভোটের তারিখ ও প্রক্রিয়া এখনো অস্পষ্ট। স্পষ্টতা ছাড়া কোনো উদ্যোগ সফল হতে পারে না।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন জানান,
“আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি সনদে স্বাক্ষর করব কি না। আজ চূড়ান্ত আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেব।”
সবশেষে প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন,
“১৭ অক্টোবরের মধ্যে জাতীয় সনদে সব পক্ষের স্বাক্ষর হবে, যা জাতির সামনে ঐক্যের নতুন অধ্যায় খুলে দেবে।”