পান্থকুঞ্জ ও হাতিলঝিল ধ্বংস করে র‌্যাম্প, স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্পের পরিকল্পনা বাতিলের আহবান

অনন্যা রহমান ঃ কারওয়ানবাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত পরিবেশ বিধ্বংসী ও জনবিরোধী এলিভেটর এক্সপ্রেস প্রকল্প বাতিলের দাবিতে ২৭ দিন ধরে চলছে কর্মসূচী। কাঠালবাগান, হাতিরপুল এলাকার একমাত্র সবুজ উদ্যোন পান্থকুঞ্জ । ছোট্ট একখন্ড উদ্যান এলাকাবাসীর জন্য অক্সিজেনের ভান্ডার। কুঞ্জ শব্দের আভিধানিক অর্থ উপবন বা লতাপাতায় আচ্ছাদিত বৃত্তাকার স্থান। আর পান্থ অর্থ পথিক। নগরীর পান্থকুঞ্জ নামের বৃক্ষশোভিত এই স্থানটি এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্তাবিত র‌্যাম্প নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা শহর যানজট, ঘনবসতি, শব্দ এবং বায়ূ দুষণের জনবহুলেএকটি নগরীতে পরিণত হয়েছে। নগরে বসবাসরত মানুষের বিনোদনের বা কিছুটা সময় গিয়ে বসার মতো জায়গার খুব অভাব। পান্থকুঞ্জের আশেপাশে এত বেশি আবাসিক ভবণ, অফিস, দোকান, মার্কেট যে এখানে ভূমিকম্প বা অগ্নিকান্ড ঘটলে আশেপাশে যাওয়ার কোন জায়গা নেই। নেই প্রাকৃতিক পরিবেশে শ্বাস নেবার মতো স্থান ।
দূষিত এলাকাগুলোর মধ্যে কারওয়ানবাজার অন্যতম কারন এখানে ট্রাফিক সমস্যা অনেক বেশি। ব্যস্ত সড়কটির চারটি সিগন্যাল ঠিকভাবে ট্রাফিক কন্ট্রোল করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এমন একটি জায়গায় শুধুমাত্র প্রাইভেট গাড়ি চালানোর জন্য বৈদেশিক ঋণের টাকায় এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক তৈরী করা হলে বরং জনদূর্ভোগ আরো বাড়বে।


ইতিমধ্যে এখানে এলিভেটর এক্সপ্রেস প্রকল্পের জন্য পার্ক এবং হাতিরঝিল জলাধার ধ্বংসে পথে। পাশাপাশি বহু অর্ধ শতাব্দি প্রাচীন গাছসহ প্রায় দুহাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। শীতকালে এখানে অবস্থান করা গেলেও গরমকালে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে এখানে দাড়িয়ে থাকা যায় না। এখনো এ উদ্যানে বহু দরিদ্র মানুষ নিজেদের জ্বালানী সংকট মেটাতে কাঠ কুড়ানোর জন্য আসে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গাছগুলো যখন কাটা হয় তখন এখানে অজস্র পাখীর বাসা ছিলো। মর্মান্তিক বিষয় হচ্ছে গাছগুলো কাটার পর পাখীগুলো এসে তাদের বাসা খুজছে। এখনো অনেক পাখী আশেপাশে উড়ে বেড়াচ্ছে একটু বসার জায়গার জন্য। চিলগুলোর বসার কোন জায়গা নেই। তারা এসে বসছে মেট্রো রেলের তারের উপর। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। পরিবেশ অধিদপ্তর গাছ কাটার ছাড়পত্র দিয়েছে কিন্তু পাখী মারার ছাড়পত্র কি তারা দিতে পারে?
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে যে জনদাবী উত্থাপন করা হয়েছিলো তার কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। যারা প্রাণ প্রকৃতি বাচাঁতে আন্দোলন করছে অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে দিন। এখানে সন্ধ্যার পর মশা, অন্ধকার এবং তীব্র শীতের কারণে কোন মানুষ থাকার মতো অবস্থা নেই। আজ ২৭ তম দিন। এর মধ্যে একদিনও সিটি কর্পোরেশন থেকে মশা মারার জন্য এখানে কোন ওষুধ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমতাবস্থায় আমরা সরকার এর কাছে পান্থকুঞ্জ ও হাতিলঝিল ধ্বংস করে র‌্যাম্প, স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্পের পরিকল্পনা বাতিলের আহবান জানাচ্ছি।
প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের তরুণদের পাশে থেকে সংহতি জানাতে আজ দুপুরে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট) এর পরিচালক গাউস পিয়ারীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সেখান গিয়েছিল। প্রকৃতি ও বৃক্ষপ্রেমী মানুষ আবদুল ওয়াহিদ সরদার (গাছ থেকে ১৪ মণের বেশি পেরেক তুলেছেন তিনি) এর হাতে বৃক্ষ তুলে দিয়ে প্রতিনিধিদল সংহতি প্রকাশ করে।