স্থায়ীত্বশীল তামাক নিয়ন্ত্রণে বেসরকারী সংস্থাসমূহকে সম্পৃক্তকরণ জরুরী’- বিষয়ক সভা ১৮ জুন ২০২৫ খুলনা সিটি খুলনা সিটি কর্পোরেশন এর নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সিয়াম,বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সচিব (সনিয়র সহকারী সচিব),খুলনা সিটি কর্পোরেশন,খুলনা শরীফ আসিফ রহমান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রনে ইতপূর্বেও খুলনা সিটি কর্পোরেশনে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্থাবনায় বাজেট বরাদ্দ থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগ বরাদ্দকৃত বাজেটের যথাযথ ব্যবহার করতে পারে নাই। কিন্তু যার যার কর্মক্ষেত্রে নির্ধারিত কাজের পাশে আমাদের সকলের ভাবতে হবে আমাদের কিছু সামাজিক দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা আছে। অফিস/কর্মস্থল,পার্ক মাঠ সহ বিভিন্ন পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে তামাক ও ধুমপানের ব্যবহার বেড়ে গেলে বা তামাক নিয়ন্ত্রন আইন লংঘন হলে ধূমপানের বিষাক্ত ধোঁয়ায় আপনার আমার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ক্যান্সারসহ নানাবিধ ব্যাধি বেড়ে যায়। পরিবার ধংস হয়ে যাবে। সে কারনে আমাদের সতর্ক থাকা একান্ত প্রয়োজন। এ বছর সিটি কর্পোরেশন পুনরায় তামাক নিয়ন্ত্রনে বাজেট বরাদ্দ রাখবে। উক্ত বাজেট দ্বারা তামাক নিয়ন্ত্রনে কার্যরত স্থানীয় সংগঠন সিয়ামের সহযোগীতায় বিভিন্ন কার্যকরী কার্যক্রম গ্রহন ও বাস্তবায়ন করা হবে।


বিশেষ অতিথি প্রোগ্রাম অফিসার (এনসিডি ও মানসিক স্বাস্থ্য),বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা আসিফ আহমেদ বলেন,তামাক নিয়ন্ত্রন কার্যক্রমে স্থানীয় সংগঠনকে সম্পৃক্তকরন করা একান্ত আবশ্যক। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থ্ াদীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে তামাক নিয়ন্ত্রন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করে আসছে। বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রন গাইডলাইন ও নির্দেশনা অনুসারে খুলনা সিটি কর্পোরেশন তামাক নিয়ন্ত্রনে স্থানীয় সংগঠন হিসেবে সিয়ামকে বরাদ্দ প্রদান করলে কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা কারিগরী সহায়তাসহ সকল কার্যক্রমে পাশে থাকবে।



অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রধান স্বাস্থ্য কমকর্তা,খুলনা সিটি কর্পোরেশন,খুলনা ডাঃ শরীফ শাম্মীউল ইসলাম বলেন, চলতি বছর বরাদ্দ বাজেটের সর্বত্তম ব্যবহার করে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় তামাক নিয়ন্ত্রন আইন বাস্তবায়নে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, তামাক ব্যবহারের কারণে বছরে ১ লক্ষ ৬১ হাজার লোক মৃত্যুবরণ এবং প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এবং ক্যানসার সোসাইটির গবেষণানুযায়ী, তামাক ব্যবহারজনিত কারণে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার কারণে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকার অধিক। তামাকের কারণে শুধু স্বাস্থ্য নয়, অর্থনীতি এবং পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।



বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট সারাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত বেসরকারী সংগঠনসমূহের সম্মিলিত মঞ্চ। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই জোট সরকারকে তামাক নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করে আসছে। বিগত দিনে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, বিধিমালাসহ বিভিন্ন সহায়ক নীতি প্রণয়ন এবং আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করে জোটের এই বেসরকারী সংস্থাগুলো গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় থেকে উপজেলা পর্যন্ত সকল পর্যায়ের টাস্কফোর্স কমিটিতে তামাক বিরোধী জোটকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন যাবত তামাক নিয়ন্ত্রণে সরাসরি প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করায় তাদের নিজস্ব দক্ষতা, সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থায়ীত্বশীল তামাক নিয়ন্ত্রণে সংগঠনগুলোর জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বূপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, দক্ষ এই সংগঠনগুলোর অধিকাংশেরই নিজস্ব তহবিল নেই, যার দরুন তারা পর্যাপ্ত কাজ করতে পারছেনা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করতে হলে স্থানীয় পর্যায়ে কার্যরত এ সংগঠনগুলোকে আর্থিক বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত করে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী।
স্থানীয় পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন কর্মসূচীকে গতিশীল করতে সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় “স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা” প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উক্ত নির্দেশিকার ৭.২ (৭.২.৭) ধারায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক ‘‘তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখা এবং বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন এবং এ সংক্রান্ত অগ্রগতির ত্রৈমাসিক/বাৎসরিক প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার বিভাগের তামাক নিয়ন্ত্রণ ফোকাল পয়েন্ট ও মনিটরিং টিমের নিকট দাখিল করা” এর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে এনআইএলজি কর্তৃক প্রণিত ‘‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে অপারেশনাল গাইডলাইন, ২০২৪’ এর অনুচ্ছেদ ৯ এ বরাদ্দ প্রদান এবং অনুচ্ছেদ ১৬ এ স্থানীয় তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি খুলনা, গাজীপুর, জামালপুর এবং সাতক্ষীরা জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকগণ জেলাসমূহের অন্তর্গত সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে তামাক নিয়ন্ত্রণে অর্থ বরাদ্দ রাখার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করতে হলে, উক্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী সকল জেলা পরিষদ/উপজেলা পরিষদ/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত বাজেট থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য অনুদান প্রদান করে দক্ষ এই সংগঠনগুলোকে মনিটরিংয়ে যুক্ত করলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকাটি বাস্তবায়ন আরো গতিশীল ও সহজ হবে। স্থানীয় সংগঠনগুলোর দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীকে আরো শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব। আলোচনাসভাটি সঞ্চলনা করেন সিয়ামের নির্বাহী পরিচালক এ্যাড.মোঃ মাছুম বিল্লাহ।