স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের দাবি করেছেন ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’–এর ব্যানারে আন্দোলনকারীরা। তাঁরা বলেছেন, পদত্যাগ না করলে আগামীকাল মঙ্গলবার(২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে মশালমিছিল হবে।
সোমবার(২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’–এর ব্যানারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। পরে বিকেল চারটার দিকে আন্দোলনকারীদের পক্ষে এ আলটিমেটাম দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদ্রিতা রায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও তরুণেরা শিক্ষা ভবনের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসির দিকে ফিরে যান।
এর আগে ‘জননিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগসহ সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন’ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, অবিলম্বে ধর্ষণ ও নিপীড়নের সব ঘটনার বিচারের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে যাত্রা করা হয়। পরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের শিক্ষা ভবনের সামনে বাধা দেয়।
শিক্ষার্থী আদ্রিতা রায় বলেন, ‘আমরা এখানে যারা আছি, আজকে আমরা প্রত্যেকে গণ–অভ্যুত্থানের অংশীদার, গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী। এই যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বসে আছেন, উনি আমাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বসে আছেন। কিন্তু তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্ম থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। পরে তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
এর আগে পুলিশের বাধার শিকার হয়ে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে শিক্ষা ভবনের সামনে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু কেউ আসেননি। পরে আগামীকালের কর্মসূচি ঘোষণা করে তাঁরা মিছিল নিয়ে ফিরে আসেন।
আন্দোলনকারীদের ৯ দফা দাবির মধ্যে আছে জননিরাপত্তাদানে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ, সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ; অবিলম্বে পাহাড়, সমতলসহ সারা দেশে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নিপীড়নের সব ঘটনার বিচার নিশ্চিত করা; সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন প্রতিরোধের আইনসমূহে প্রয়োজনীয় যৌক্তিক সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধন। এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ধর্ষণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা, অপরাধী বা ভুক্তভোগীর জেন্ডার নির্বিশেষে, সব ধরনের পেনিট্রেশনকে ধর্ষণের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেন।
ধর্ষণের কেস নেওয়া নিয়ে যে থানাগত জটিলতা, তা দূর করার দাবিও ছিল ৯ দফা দাবির মধ্যে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী ও সাক্ষীকে সব ধরনের সুরক্ষা দিতে ২০১১ সালে পর্যালোচিত সাক্ষী সুরক্ষা আইন পুনরায় পর্যালোচনা ও প্রয়োগ করার দাবি করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা, স্লাটশেমিং এবং বরখাস্তের ঘটনা পূর্ণ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমন্বয়ে স্বাধীন যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করার দাবি করা হয়। সেই সেলে আবশ্যিক নারী সদস্য থাকবে। অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে, দোষীকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা ওই সেলকে দেওয়ার দাবি করা হয়।