পরিবেশ সুরক্ষা ও জীবন বাঁচাতে মহাখালী ডিওএইচএস এলাকা হতে বিএটি’র সিগারেট কারখানা সরান

প্রধান উপদেষ্টার নিকট খোলাচিঠি

তামাক বিরোধী ডিজিটাল প্ল্যাটফরম স্টপ টোব্যাকো বাংলাদেশ অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি খোলা চিঠি দিয়েছে। মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিধ্বংসী সিগারেট কারখানা অবিলম্বে অপসারণ করার দাবিতে এ খোলা চিঠি দেয়া হয়। পত্রে বলা হয়, যে সিগারেট কারখানা ১৯৯০ সালেই আবাসিক এলাকা হতে অপসারণ করার প্রসঙ্গটি উঠে আসে সেটি কিভাবে ৩৫ বছর যাবত ঢাকার পরিবেশের ক্ষতি করে যাচ্ছে – এটি একটি বড় প্রশ্ন। এছাড়া পরিবেশ আইনের অধীন পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ এ সিগারেট কারখানা ‘লাল’ শ্রেণিভুক্ত ছিলো। ফলে এ কারখানা কোনোভাবেই আবাসিক এলাকায় থাকার কথা নয়। তারপরও ২৬ বছর বিনা বাধায় বিএটি এ কারখানা পরিচালনা করে। উপরন্তু, বিএটি বিগত সরকারের প্রভাবশালী সচিব ও রাজনীতিকদের সুবিধা দিয়ে ও বোর্ডের সদস্য করে প্রভাব বিস্তার করে ২০২৩ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা সংশোধন করে সিগারেট কারখানাকে ‘লাল’ এর পরিবর্তে ‘কমলা’ শ্রেণিভুক্ত করে। এ অনৈতিক কাজ কিভাবে সম্পন্ন হয়েছে তার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

পত্রে বলা হয়, ১৯৬৫ সালে যখন ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় তামাক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশ-এর একটি সিগারেট কারখানা স্থাপন করা হয়। কিন্তু, ষাট দশকে এ এলাকা তৎকালীন ঢাকা শহরের অংশ ছিলো না ও গ্রামীণ জনপদ ছিলো। ক্রমান্বয়ে মহাখালী ডিওএইচএস ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশ্র-আবাসিক এলাকায় রূপান্তরিত হয়েছে। এখানে হাজার হাজার পরিবারে শিশু, বৃদ্ধসহ কয়েক লক্ষ মানুষ বসবাস করে। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শিশু লেখাপড়া করে।

বিএটি’র সিগারেট কারখানা থেকে নির্গত নিকোটিসহ হাজার হাজার বিষাক্ত রাসায়নিক মহাখালী, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। এতে ডিওএইচএসসহ সংলগ্ন এলাকার শিশু-নারী-বৃদ্ধসহ সকল মানুষের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শিশুদের অ্যাজমা/হাঁপানি, এমফাইসিমাসহ ফুসফুস ও শ্বাসনালী দীর্ঘমেয়াদী রোগ [ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পলমনারি ডিজিজ – সিওপিডি] ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে যারা এসব রোগ আক্রান্ত হয়েছে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেড়েছে, বাড়ছে।

এছাড়া, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তামাক পাতা আনা-নেয়া এবং উৎপাদিত সিগারেট সারাদেশে পাঠানোর জন্য বড় বড় ট্রাক-লরির আগমনে এ এলাকায় সড়কে ব্যাপক চাপ পড়ে, সড়কের ক্ষতি করে, তৈরি হয় যানজট, সৃষ্টি করে শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ। এসব বড় বড় লরি শিশুসহ সকল সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য ভয়ের কারণ।

বিএটি যখন বুঝতে পেরেছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ উন্নয়নে কর্মরত সংস্থাসমূহ ‘লাল’ তালিকাভুক্ত মারাত্মক ক্ষতিকর কারখানা মহাখালী ডিওএইচএস এলাকা থেকে সরানোর জোর দাবি জানাবে এবং আইন অনুযায়ী কোন ‘লাল’ তালিকার কারখানা আবাসিক এলাকায় থাকতে পারবে না। সেজন্য বিএটি সংশ্লিষ্টদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে, বিএটি’র বোর্ডে সচিব এবং বিএটিতে কর্মরত সচিব ও সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের সন্তানদের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা সংশোধন করে ক্ষতিকর সিগারেট কারখানাকে ‘লাল’ তালিকা হতে বাদ দিয়ে ‘কমলা’ শ্রেনীভুক্ত করা হয়েছে।

আইন অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের পর এ কারখানার কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র পাবার কথা নয়। তাহলে কিভাবে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় এখনো বিএটি সিগারেট কারখানা পরিচালনা করছে, কিভাবে এ কারখানা পরিবেশ ছাড়পত্র বা অন্যান্য অনুমতি পায় তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে, কোন অনৈতিক সুবিধার কারণে, কার সিদ্ধান্তে মারাত্মক ক্ষতিকর ‘লাল’ তালিকা হতে সিগারেট কারখানা ‘কমলা’ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, এগুলো তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কেন ও কিভাবে রাষ্ট্রের ক্ষতি করে তামাক চাষের উপর আরোপিত রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে, বিগত সময়ে কারা কিভাবে তামাক কোম্পানিকে অনৈতিক সুবিধা দিয়েছে এবং এর বিনিময়ে সরকারের কি ক্ষতি করেছে এগুলো তদন্ত করে দোষীদের সাজা দেয়া প্রয়োজন।

বিশ্বের অন্যান্য দেশ শহরের মাঝখান থেকে ক্ষতিকর তামাক কারখানাগুলো সরিয়ে পরিবেশবান্ধব শহর গড়ে তুলছে। ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায়্ও অনুরূপ পরিবেশবান্ধব ও জনহিতকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

সেখানে ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে কেন সিগারেট কারখানা থাকবে? ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা মহাখালীর ডিওএইচএস থেকে বিএটি’র সিগারেট কারখানা অপসারণ করার জোর দাবি জানাই।