আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলায় নিহত ৪০, আহত ১৭০: সীমান্তে উত্তেজনা চরমে

আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোলদাক শহরে পাকিস্তানের ভয়াবহ বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ১৭০ জন। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশুসহ সাধারণ বেসামরিক মানুষ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে অবস্থিত স্পিন বোলদাক শহরটি গত কয়েকদিন ধরে তীব্র সামরিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ স্পিন বোলদাকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা করিমুল্লাহ জুবাইর আগা-এর বরাত দিয়ে এই হতাহতের তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নারী-শিশুদের ওপর হামলা: স্থানীয়দের ক্ষোভ
হামলায় আহত হাজি বাহরাম নামের এক ব্যক্তি তোলো নিউজকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি ইতিহাসে কখনও এমন অবিচার দেখিনি। একটি দেশ, যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে— তারা এখানে নারী, শিশু ও বেসামরিক লোকজনের ওপরে হামলা করল।”
বিমান হামলার পাশাপাশি পাকিস্তানি স্থলবাহিনী স্পিন বোলদাক শহরের নোকলি, হাজি হাসান কেলাই, ওয়ার্দাক, কুচিয়ান, শহীদ ও শোরবাক এলাকায় একের পর এক আর্টিলারি গোলা নিক্ষেপ করেছে। এতে বেশ কিছু আবাসিক ভবন ও দোকানপাট সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন।
৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি শেষে আবার সংঘাত
সীমান্তে গত ১১ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত চার দিন ধরে চলা তীব্র সংঘাত ও হামলা-পাল্টা হামলার পর ১৫ অক্টোবর ৪৮ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী। তবে সেই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয় ১৭ অক্টোবর স্থানীয় সময় দুপুর একটার দিকে। এর পরপরই আবার সহিংসতা শুরু হয় সীমান্ত এলাকায়।
চার দিনব্যাপী সংঘাত শুরু হয়েছিল ১১ অক্টোবর, ঠিক যখন আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পাকিস্তানের বিমান হামলায় তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ নিহত হওয়ার দুই দিন পর। ওই হামলায় কাবুলে টিটিপির নেতাকে লক্ষ্য করে অভিযান চালায় পাকিস্তানের বিমান বাহিনী।
সংঘাতের মূলে টিটিপি ইশু
আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের এই সাম্প্রতিক সংঘাতের মূলে রয়েছে তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। কয়েক বছর আগে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীটি দিনকে দিন পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে।
আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া টিটিপির প্রধান কার্যকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গোষ্ঠীটির কার্যক্রম আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের বারবার অভিযোগ, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার টিটিপিকে মদত ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। তবে কাবুলের তালেবান প্রশাসন সব সময়ই এই অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে এসেছে।
উত্তেজনা কমার লক্ষণ নেই
গত ৯ অক্টোবর কাবুলে টিটিপির শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদকে হত্যার পর থেকেই সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এরপর ১১ অক্টোবর খাইবার পাখতুনখোয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় পাক-আফগান সেনাবাহিনীর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ শুরু হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা দ্রুত কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। টিটিপি ইশুকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ এখন সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ রয়েছে।

সূত্র: তোলো নিউজ