গাজার অবরুদ্ধ জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা নিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’য় ইসরায়েলি নৌবাহিনীর হামলা ও স্বেচ্ছাসেবক আটকের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মালয়েশিয়ার পর তুরস্কও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাতে ভূমধ্যসাগরে খাদ্য, ওষুধ ও জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম বহনকারী নৌবহরটি ইসরায়েলি বাধার মুখে পড়ে। ইসরায়েলি নৌসেনারা অন্তত ১৩টি জাহাজ থামিয়ে তাতে উঠে পড়ে এবং চলমান সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। পরে দুই শতাধিক মানবাধিকারকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবককে আটক করে জাহাজেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
আটক কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বখ্যাত সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফরাসি সদস্য এমা ফুরো এবং আর্জেন্টাইন আইনপ্রণেতা সেলেস্ট ফিয়েরো। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছে, আটককৃতদের দেশটির একটি নৌবন্দরে নেওয়া হচ্ছে।
মালয়েশিয়া-তুরস্কের কঠোর প্রতিক্রিয়া
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে ‘ভীতি প্রদর্শন ও জবরদস্তি’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বাধা দিয়ে ইসরায়েল মানবতার প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে। আটক জাহাজগুলোতে ১২ জন মালয়েশীয় নাগরিকও রয়েছেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে ফ্যাসিবাদী ও সামরিকতাবাদী নীতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, তারা আটক তুর্কি নাগরিকদের মুক্তির জন্য আইনি পদক্ষেপ নেবে।
আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস ঘটনাটিকে শান্তিপূর্ণ মানবিক উদ্যোগের ওপর হামলা বলে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ফ্লোটিলায় থাকা আইরিশ নাগরিকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানান।
বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভের ঢেউ
ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে স্পেন, ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক ও গ্রিসসহ ইউরোপের একাধিক দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্স, মেক্সিকো সিটি এবং কলম্বিয়ার বোগোতায়ও মানুষ রাস্তায় নেমেছে।
আঙ্কারা ও মাদ্রিদের রাস্তায় বিক্ষোভকারীরা আটক কর্মীদের মুক্তি এবং গাজার অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তারা ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য এমা ফুরো, যিনি নিজেও ফ্লোটিলার একটি জাহাজে অবস্থান করছেন, বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “ইসরায়েলকে অবরুদ্ধ করো, গাজার অবরোধ ও গণহত্যা শেষ করো।”
মিশন থামবে না
এই হামলার পরও গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের মানবিক মিশন থেমে থাকবে না। তারা গাজার অবরুদ্ধ মানুষের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিনের ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় তীব্র মানবিক সংকট চলছে। খাদ্য, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির ঘাটতিতে ভুগছে সেখানকার লাখো মানুষ।
তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা ও রয়টার্স