ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে প্রস্তুত ফ্রান্স-জার্মানি, পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা

রাশিয়ার আগ্রাসী যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় মস্কোর ওপর নতুন চাপ সৃষ্টির ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের দুই প্রভাবশালী শক্তি—ফ্রান্স ও জার্মানি। দেশ দুটি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি না হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারি

শুক্রবার (২৯ আগস্ট) ফরাসি দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী টলনে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেন—

“আমি আশা করি পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু যদি না হয়, তবে আমরা প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞার পথে যাব, যা রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য করবে।”

তিনি আরও সতর্ক করেন, পুতিন বৈঠক এড়িয়ে গেলে তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে “রাজনৈতিক খেলা করার সমান” হবে।

জার্মান চ্যান্সেলরের মন্তব্য

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎজ বৈঠক শেষে বলেন—

“রাশিয়ার আগ্রাসন এখন তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে। বাস্তবতা হলো, এই যুদ্ধ আরও অনেক মাস স্থায়ী হতে পারে। তবে আমরা ইউক্রেনকে পরিত্যাগ করব না।”

তার মতে, পুতিন আলোচনার কোনো প্রস্তুতি দেখাচ্ছেন না, যা আসলে “রুশ প্রেসিডেন্টের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ।”

নতুন সামরিক সহায়তার ঘোষণা

টলনের বৈঠক শেষে ফ্রান্স ও জার্মানি যৌথ বিবৃতিতে জানায়, ইউক্রেনকে অতিরিক্ত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ইউরোপে পারমাণবিক প্রতিরোধ কৌশল নিয়ে একটি নতুন সংলাপ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কিয়েভে ভয়াবহ হামলা

বৈঠকের একদিন আগে, বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট), ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে চার শিশু ছিল। কয়েক ডজন আহত হয়েছে।

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক পোস্টে লিখেছেন—

“এটি একেবারেই জঘন্য হামলা। এতে স্পষ্ট হচ্ছে পুতিন শান্তির পথে না গিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়াকেই লক্ষ্য বানিয়েছেন।”

এটি ছিল কয়েক মাসের মধ্যে কিয়েভে সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ও বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার সাংবাদিকদের বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধে অবিচলভাবে কাজ করছেন।
তার ভাষায়—

“এটি হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার প্রচেষ্টা, যা সারা বিশ্বের জন্যই স্বাগত জানানো উচিত।”

ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে সংলাপ পুনঃস্থাপন করতে চেয়েছিলেন। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর সেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।

কূটনৈতিক অচলাবস্থা

ফ্রান্স ও জার্মানির সর্বশেষ এই অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ইউরোপ রাশিয়ার ওপর সামরিক ও অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়াতে প্রস্তুত। পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠক এখনো অনিশ্চিত, আর সেটি না হলে নিষেধাজ্ঞার নতুন ধাপ কার্যকর হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধানে পশ্চিমা বিশ্ব যতটা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, রাশিয়ার কৌশলগত অনমনীয়তা ততটাই স্পষ্ট হচ্ছে।

সূত্র : এএফপি।

Share This News